Advertisement
E-Paper

পুজোর দিন কম, খুদেদের অভিমান

গোলাপী মলাটের বই-এর রচিয়তাকে হাতের নাগালে পেলে দু’কথা শুনিয়ে দিত দুবরাজপুরের রঞ্জনবাজারের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ভূমিকা দাস, লাভপুরের ষষ্ঠীনগরের পঞ্চম শ্রেণির ঋতম চট্টোপাধ্যায়রা। পাঠ্য বইতে ফুটো চৌবাচ্চা কিংবা বাঁদর-লাঠির মতো খটোমটো অঙ্ক ঢোকানোর জন্য নয়।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৮
ময়ূরেশ্বরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

ময়ূরেশ্বরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

গোলাপী মলাটের বই-এর রচিয়তাকে হাতের নাগালে পেলে দু’কথা শুনিয়ে দিত দুবরাজপুরের রঞ্জনবাজারের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ভূমিকা দাস, লাভপুরের ষষ্ঠীনগরের পঞ্চম শ্রেণির ঋতম চট্টোপাধ্যায়রা। পাঠ্য বইতে ফুটো চৌবাচ্চা কিংবা বাঁদর-লাঠির মতো খটোমটো অঙ্ক ঢোকানোর জন্য নয়। কচিকাঁচাদের গোলাপী মলাটের বই প্রণেতার উপর যত রাগ পুজোর বরাদ্দে ১ দিন কমে যাওয়াতেই। ওই বই আসলে পঞ্জিকা। গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব পরিবারেই পঞ্জিকা রাখাটা দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি। বড়রা মাস খানেক আগেই ওই পঞ্জিকা দেখে জানিয়ে দিয়েছেন এ বার দুর্গা পুজো তিনদিনের। ওই কথা শোনার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে খুদেরা।

তাদের ধারণা, পঞ্জিকা প্রণেতাদের কারসাজিতেই এমনটা হয়েছে। লাভপুরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিমা রায়, একই ক্লাসের দুবরাজপুর বাজার এলাকার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলে, “স্কুলের বইয়ে কঠিন অঙ্ক কিংবা ইংরেজি তবু মানা যায়। কিন্তু পঞ্জিকা অনুসারে তিন দিনের পুজো কিছুতেই মানতে পারছি না। যাঁরা পঞ্জিকা লিখেছেন তাঁদের পেলে তিনদিন কেটে চারদিন লিখিয়ে ছাড়তাম।”

নবদ্বীপের বিশিষ্ট শাস্ত্রকার শুভেন্দুকুমার সিদ্ধান্ত বলেন, “অধিকাংশ বছর দুর্গা পুজো সাধারণত ৪ দিনের হয়। এ বারে সকাল ৮টা ১৪ মিনিটে অষ্টমী শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই দিনই নবমী পুজোও সম্পূর্ণ হচ্ছে। এ বারে পুজো তাই ৩ দিনের। এর আগেও একই এমনটা হয়েছে। একই কারণে ৫ দিনেরও পুজো হতে পারে। তবে তা কখনও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”

গ্রহ-নক্ষত্রের ওই সব জটিল বিষয় নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাতে রাজি নয় কচিকাঁচারা। লাভপুরের পঞ্চম শ্রেণির পৌলমী ঘোষ, ময়ূরেশ্বরের কুণ্ডলার নবম শ্রেণির সুকান্ত মণ্ডলদের কথায়, “এমনিতেই ৪ দিনের পুজোয় দশমীতে ঢাকিরা যখন ঢাকের বোল পাল্টে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ বাজাতে শুরু করে তখন মন খারাপ হয়ে যায়। এ বার এখন থেকেই মন খারাপ।”

শুধু শিশু মন নয়। মনমরা অবস্থা বড়দেরও। লাভপুরের গৃহবধূ মৌসুমী ঘোষ, কনিকা চট্টোপাধ্যায়, নানুরের সবিতা গড়াই, সংযুক্তা সিংহরা বললেন, “আমাদের গ্রাম্য জীবনে পুজোর ক’টা দিনই বৈচিত্রময়। তা থেকে ১টা দিন কমে গেলে খারাপ তো লাগবেই।” অন্য দিকে, নানুরের বারিয়া মোল্লা, আমোদপুরের রতন দাসরা বলেন, “আমরা বাজি-পটকা বিক্রি করি। পুজোর একটা দিন কমে যাওয়ায় বিক্রিও মার খাবে।” একই আশঙ্কা ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার খাবারের দোকানদার সঞ্জিত কোনাই, কোটাসুরের মহাদেব দাসদেরও। তাঁদের আক্ষেপ, “পুজো ৪ দিন প্রিয়জনদের নিয়ে ঠাকুর দেখার ফাঁকে মানুষজন খাবারের দোকানেও ভিড় জমান। ওইসময় অধিকাংশই থাকেন দরাজহস্ত। ভাল বিক্রিও হয়। এ বার তা কমে যাবে!”

পুজো কমিটিগুলি অবশ্য ওই ঘাটতি পুরণে নানা রকম পরিকল্পনা নিয়েছে। দুবরাজপুর ইয়ুথ কর্ণার ক্লাবের সম্পাদক সোমেশ আচার্য, লাভপুর ষষ্ঠীনগর ইয়ং সোসাইটির সন্দীপ ঘোষরা বলেন, “পুজোর ১ দিনের অভাব পূরণ করতে আমরা পঞ্চমী থেকেই মণ্ডপ খুলে নানা অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

durga puja pujo arghya ghosh mayureswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy