তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কিছুতেই থামছে না পাত্রসায়রে। এ বার দলেরই এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যাকে হেনস্থা করায় নাম জড়ালো দলেরই অন্য এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তার পাল্টা হিসাবে এক তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় আটকে দলের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠল অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
পাত্রসায়রে থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বুধবার দুপুরের এই ঘটনায় ফের তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল সামনে চলে এল। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। থানার সামনে ঘটনা ঘটায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। লোকসভা ভোটের পর থেকে পাত্রসায়রে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুই গোষ্ঠীর একাধিক কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। শান্তি মিছিলের নামে কার্যত দু’পক্ষ এলাকায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এরই মধ্যে বুধবার দুপুরে পাত্রসায়র গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ময়রাপুকুর গ্রাম সংসদ থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সদস্যা আরতি বাস্কেকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে প্রধানের ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। আরতিদেবীর অভিযোগ, “ময়রাপুকুরের বাসিন্দা শেখ জয়নাল মিদ্যা ও শেখ সুরজ নামে দুই যুবক পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যেই আমাকে ১০০ দিন কাজের একটি প্রকল্পে সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে একটি ফর্মে সই করাতে জোরাজুরি করেন। আমি ওদের কথামত সই করতে রাজি না হওয়ায় ওরা আমাকে টানাহ্যাঁচড়া করে। আমার কাছে থাকা কয়েকটি জরুরি কাগজও ওরা কেড়ে নিয়ে পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেয়।”
এরপর তিনি ঘটনাটি তাঁর গোষ্ঠীর স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের জানান। অভিযোগ এরপরেই প্রথমে শেখ জয়নালকে মারধর করা হয়। কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে তাঁর সঙ্গী শেখ সুরজকে পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ডে আটকে থানার পাশে তৃণমূলের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পাত্রসায়র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
শেখ জয়নালের দাবি, “গ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার কথা বলেছিলাম আরতিদেবীকে। আমার সঙ্গে তাঁরা সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যে হেনস্থা করিনি।” তাঁর দাবি, তিনি দলের ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই তাঁর উপরে ওদের আক্রোশ। তাই তাঁদের মারধর করা হয়। তাঁর অভিযোগ, “টিএমসিপি নেতা সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত-সহ কয়েকজন সুরজকে রাস্তা থেকে দলীয় কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। তার কাছে থাকা টাকা, সোনার হার, মোবাইল, হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেয়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি-র জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত ওরফে গোপে দত্তর দাবি, “ওই মহিলা সদস্যকে পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যে ওরা হেনস্থা করে গালিগালাজ করেছেন। কেন এমনটা ওরা করলেন, রাস্তায় তা ওদের কাছে দলের কয়েকজন জানতে চেয়েছিল। মারধর করা হয়নি। আমিও সেখানে ছিলাম না।” পাত্রসায়র পঞ্চায়েতের প্রধান সুব্রত কর্মকার দাবি করেন, “পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। তা সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রথমে জয়নাল, পরে সুরজকে ওরা মারধর করেছে।” স্নেহেশবাবু বলেন, “গোটা ঘটনাটি দলের উঁচুতলায় জানানো হয়েছে। এলাকার এক তোলাবাজই এ সব করাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy