Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রশাসন উদাসীন, ভেঙে পড়ল হিংলোর জীর্ণ সেতু

সংস্কার না করলে জীর্ণ সেতু যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কাটা ছিলই। সেটাই সত্যি হল রবিবার সকালে। ট্রাক্টরে সবে ইট বোঝাই করে হিংলো নদীর সেচ খালের ওই সেতুর উপরে উঠেছেন চালক বাপি বাগদি। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সেতুটি।

দুর্ঘটনার পরে। কোনও রকম ভাবে ঝুলে রয়েছে ট্রাক্টর। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনার পরে। কোনও রকম ভাবে ঝুলে রয়েছে ট্রাক্টর। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

সংস্কার না করলে জীর্ণ সেতু যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কাটা ছিলই। সেটাই সত্যি হল রবিবার সকালে। ট্রাক্টরে সবে ইট বোঝাই করে হিংলো নদীর সেচ খালের ওই সেতুর উপরে উঠেছেন চালক বাপি বাগদি। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সেতুটি। সাতটা নাগাদ ট্রাক্টেরর ডালাটি ঝুলে পড়ে। সেতুর ভেঙে পড়া কংক্রিটের চাঁইয়ে ইঞ্জিনটি কোনওক্রমে উপরে আটকে থাকতে সমর্থ হয়। সামন্য চোট আঘাত লাগলেও আশ্চর্যজনকভাবে বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন চালক ও ইট বোঝাই করতে যাওয়া তিন শ্রমিক। গ্রামের বাপি বাগদি ও শ্রমিক জ্বালা ডোম, সঞ্জয় বাগদিরা বলছেন, “ভাগ্যের জোরে বেঁচেগেলাম।” দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিত্‌সা করিয়ে এসেও তখনও ভয়ে কেঁপে চলেছেন তাঁরা।

দুবরাজপুর থেকে লোবা যাওয়ার রাস্তায় চিত্‌গ্রামের কাছাকাছি হিংলো নদীর সেচ খালের উপর থাকা সেতুটির অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ ছিল। এ দিন সেতুটি ভেঙে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকগুলি গ্রামের মানুষ। দেবীপুরচর, লোবা, পলাশডাঙা, জোপলাই, উত্তরডাহা, ধ-গড়িয়া, কনাইপুর, আগুলিয়া, ভাঁড়া, চিত্‌গ্রামের মতো বিভিন্ন গ্রামের মানুষ যাঁরা অহরহ বিভিন্ন কাজে দুবরাজপুরে আসতে বা যেতে ওই সেতুর উপর নির্ভরশীল। তাঁদের প্রশ্ন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? কেন এতদিন প্রশাসন সেতুটির জীর্ণদশা জেনেও কাজে হাত দেয়নি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেহাল সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দায়িত্ব সেচ দফতরেরই। যদিও কোনও ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ এ কাজ করাতে পারে। কিন্তু বহু আগে থেকে বেহাল হয়ে পড়া সেতুটির দিকে অবশ্য কেউই নজর দেনয় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খয়রাশোলে হিংলো জলধার ১৯৪৭ সালে তৈরি হয়। তার দু-তিন বছর পরেই তৈরি হয় বিভিন্ন সেচখাল ও সেতুগুলি। দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা চিত্‌গ্রামের পাশ দিয়ে লোবা এলাকায় যাওয়া সেচখাল ও সেতু সেগুলির অন্যতম। চিত্‌গ্রামের আলিহোসেন খান, কাশেম আলি খান, পলাশডাঙা গ্রামের সুজিত সরকার, দেবীপুরের প্রেমানন্দ সিংহ, তিলডাঙাল গ্রামের জয়ন্ত খাঁ বলছেন, “এই সেতুটির অবস্থা যে খুবই খারাপ সে কথা তো কারও অজানা ছিল না। তা সত্ত্বেও এ কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং সেচ দফতরকে বহু বার বলা হয়েছে। শুধুমাত্র জীর্ণ হয়ে পড়েছিল বললেও সেতুটি সম্পর্কে পুরো কথা বলা হল না।” এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সেতুটি একই সঙ্গে খুব সঙ্কীর্ণ ও অসম্ভব খাড়াইও ছিল। ফলে সাইকেল বা গরুগাড়ির পক্ষে সেতু পারাপার করা খুবই কষ্টের। দুর্ঘটনাও লেগেই থাকত। সবচেয়ে সমস্যার মোষ বা গরু রেলিংবিহীন এই সেতু থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়শই জখম হয়েছে বা মারা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও ভ্রুক্ষেপ করেনি প্রশাসন।

সেতুটির অবস্থা যে বিপজ্জনক ছিল সেটা মেনে নিয়েছেন খয়রাশোলে হিংলো সেচ দফতরের এসডিও সাধন গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “সেতুটির সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে বহু আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি অকর্ষণ করা হয়েছিল। তবে কাজ হয়নি। এ দিন ফের সেতু ভেঙে পড়ার খবর দেওয়া হয়েছে।” ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “সেতুটি নিয়ে চিন্তাভাবনার মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটল। বর্তমানে সেচখালে জলের পরিমাণ কম থাকায় আপাতত হিউমপাইপ দিয়ে মানুষের চালাচলের রাস্তা ঠিক করানোর ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়ি সেতুটি যাতে নতুন করে গড়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষপ নেওয়া হবে।” তবে সেচ দফতর যাই বলুক না কেন, স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, সামনে কালীপুজো। অন্য রাস্তা থাকলেও সহজে ওই রাস্তা ধরেই লোবার বিখ্যাত কালী মন্দিরে যান হাজার হাজার মানুষ। কালীপুজোর আগে সেচ দফতর কতটা কী করতে পারবে, তা নিয়ে চিন্তায় এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE