Advertisement
E-Paper

‘পণ’ ভেঙে হাসপাতাল ছেড়ে স্বামীর ঘরে বধূ

টানা ১৪ মাস হাসপাতালই ছিল ঘরবাড়ি। সঙ্গে ছোট মেয়ে। যা-ই হোক না কেন, শ্বশুরবাড়িতে ফিরবেন না বলে পণ করেছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশের শত চেষ্টাতেও সে পণ ভাঙানো যায়নি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০২:৩৭
হাসপাতাল ছাড়ার আগে রুনুঝুনু লোহার।  ছবি: অভিজিৎ সিংহ

হাসপাতাল ছাড়ার আগে রুনুঝুনু লোহার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

টানা ১৪ মাস হাসপাতালই ছিল ঘরবাড়ি। সঙ্গে ছোট মেয়ে। যা-ই হোক না কেন, শ্বশুরবাড়িতে ফিরবেন না বলে পণ করেছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশের শত চেষ্টাতেও সে পণ ভাঙানো যায়নি।

অবশেষে বাঁকুড়া জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণা দত্তের মধ্যস্থতায় জট কাটল। বুধবার স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে ফিরলেন বাঁকুড়ার সিমলাপালের বছর আঠাশের বধূ রুনুঝুনু লোহার। স্ত্রী-র উপরে অত্যাচার করা হবে না, এই মর্মে অপর্ণাদেবীর কাছে মুচলেখা দিয়ে রুনুঝুনুকে নিয়ে যান তাঁর স্বামী। ওই বধূর উপরে আর যাতে নির্যাতন না হয়, সে জন্য স্থানীয় থানাকে নজর রাখতেও বলেছেন অপর্ণাদেবী।

অথচ, এমন হওয়ার কথা ছিল না। ছ’বছর আগে যে দিন প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করেন, ভেবেছিলেন, শ্বশুরবাড়ি আপন করে নেবে। কিন্তু পরপর তিন মেয়ের জন্ম দেওয়ায় রুনুঝুনু চক্ষুশূল হন শ্বশুরবাড়ির লোকেদের। স্বামী তারাপদ লোহার পেশায় দিনমজুর। সংসারে অনটন। শাশুড়ি মায়াদেবীর সঙ্গে নানা বিষয়ে বৌমার খিটিমিটি লেগেই থাকত। রুনুঝুনুর কথায়, “তিন মেয়ের জন্ম দেওয়ায় যেমন কথা শুনতে হত, তেমনই বাপের বাড়ি থেকে পণ না নিয়ে আসার জন্যও জুটত খোঁটা।”

সমস্যা চরমে ওঠে গত বছর ছোট মেয়ে বৃষ্টি জন্মানোর ২১ দিনের মাথায়। রুনুঝুনুর অভিযোগ, ওই দিন তারাপদ তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। অসুস্থ হয়ে গত বছর ২৫ এপ্রিল বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হন তিনি। সঙ্গে সদ্যোজাত মেয়ে। কিন্তু ভর্তি করে দেওয়ার পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আর খোঁজ নেয়নি তাঁর। হাসপাতাল থেকে ছুটি মিললেও রুনুঝুনু ঠিক করেন, শ্বশুরবাড়িতে ফেরা নয়। টানা ১৪ মাস বাঁকুড়া মেডিক্যালের ফিমেল ওয়ার্ডই মা-মেয়ের ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির এক বছরের জন্মদিনটাও কাটে হাসপাতালেই। শ্বশুরবাড়িতে চিঠি দিয়ে ওই বধূকে নিয়ে যেতে বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সে চিঠির জবাব আসেনি।

হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু জানান, অনেকেই ওই বধূকে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতেন। মাঝেমাঝেই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেরিয়ে পড়তেন রুনুঝুনু। তখন খবর যেত পুলিশে। দিনের শেষে মেয়েকে নিয়ে আবার হাসপাতালেই ফিরতেন বধূটি। সুপার বলেন, “ব্যাপারটা বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে মহিলাকে পথে বার করে দেওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি এসডিওকে (বাঁকুড়া সদর) জানাই।”

এসডিও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন। সিমলাপাল থানার পুলিশের মধ্যস্থতায় তারাপদ হাসপাতালে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতেও যান। কিন্তু রুনুঝুনু বেঁকে বসেন। পুলিশ বিফল হতে জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিকের দ্বারস্থ হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আর তাতেই বরফ গলে!

অপর্ণাদেবী হাসপাতালে গিয়ে রুনুঝুনুর ‘কাউন্সেলিং’ করেন। শ্বশুরবাড়িতে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে সেখানে ফিরতে রাজি করান। বুধবার বিকেলে মহিলা সুরক্ষা দফতরে দুই মেয়েতিন বছরের জয়া ও পাঁচ বছরের পূজা এবং মা মায়াদেবীকে নিয়ে হাজির হন তারাপদবাবু। হাসপাতাল থেকে আসেন রুনুঝুনুও। প্রায় ১৪ মাস পরে মাকে দেখে দুই মেয়ে কেঁদে ফেলে। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ওই বধূও। যদিও স্বামীর প্রতি তাঁর অভিমান কমেনি।

তাঁর বিরুদ্ধে অপর্ণাদেবীর কাছে ক্ষোভ উগরে দেন রুনুঝুনু। তারাপদবাবুও স্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শেষে মুচলেকা দিয়ে স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে বলেন, “স্বামী-স্ত্রী-র মধ্যের মন কষাকষি এমন চেহারা নেবে ভাবিনি। যা হোক, সব মিটে গিয়েছে।”

লোহার দম্পতিকে দু’মাস অন্তর তাঁর অফিসে এসে দেখা করতে বলেছেন অপর্ণাদেবী। তাঁর কথায়, “স্বামীর কাছ থেকে ভালবাসা না পেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন ওই বধূ। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সাহস হচ্ছিল না। সেই সাহসটাই ওঁকে দিয়েছি মাত্র।”

housewife return to in-laws house rajdeep bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy