Advertisement
E-Paper

বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন, বলছে পঞ্চম রেজাউল

গ্রামের চৌহদ্দিতেই শৈশব পার হয়ে স্কুলের চৌকাঠে পা রাখা। টিউশন নিতে সাইকেলে ছ’কিলোমিটার দূরে হুড়ায় যেতে হত। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য ও বাড়িতে পড়ার বইয়ে ডুবে থাকা। এই মিলিত প্রয়াসই হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছে হুড়া ব্লকের মাগুড়িয়া গ্রামের রেজাউল আনসারিকে। ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। বাংলা ও ভূগোল বাদে অন্য সব বিষয়ে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে এই কৃতী ছাত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০০:৪০
মার্কশিট হাতে রেজাউল।

মার্কশিট হাতে রেজাউল।

গ্রামের চৌহদ্দিতেই শৈশব পার হয়ে স্কুলের চৌকাঠে পা রাখা। টিউশন নিতে সাইকেলে ছ’কিলোমিটার দূরে হুড়ায় যেতে হত। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য ও বাড়িতে পড়ার বইয়ে ডুবে থাকা। এই মিলিত প্রয়াসই হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছে হুড়া ব্লকের মাগুড়িয়া গ্রামের রেজাউল আনসারিকে। ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। বাংলা ও ভূগোল বাদে অন্য সব বিষয়ে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে এই কৃতী ছাত্র।

মাগুড়িয়ার বেশির ভাগই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। জীবিকা বলতে বৃষ্টিনির্ভর চাষ। রেজাউল যখন স্থানীয় মজফ্ফর আহমেদ অ্যাকাডেমিতে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া, তখনই কিডনির যটিল অসুখে মারা যান বাবা রফিক আনসারি। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কর্মী, রেজাউলের জেঠু অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। শেষ অবধি কোনও প্রতিকূলতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মেধাবী রেজাউলের কাছে। অসম্ভব পরিশ্রম করে হাই মাদ্রাসায় ভাল ফল করে পরিবার ও স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে সে।

রাজ্যে পঞ্চম স্থান পাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ মাহাতো রেজাউলের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দিতেই রেজাউল জানতে পারে সে মাদ্রাসা বোর্ডে পঞ্চম হয়েছে। রেজাউলের মা হাজেরা বিবি বললেন, “ও ভাল ফল করেছে, সকলেই বলছেন। আমারও ভাল লাগছে।” মজফ্ফর আহমেদ অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক আহমদুল্লা আনসারি বলেন, “রেজাউলকে ছোটবেলা থেকেই তো দেখছি। ক্লাসে প্রত্যেক বছর প্রথম হয়ে এসেছে। ও পড়তে চাইলে আমরা ওকে সব দিক দিয়ে সাহায্য করব।”

আহমেদ।

রেজাউলের প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র। তাঁর কথায়, “শরৎচন্দ্রের গল্প খুব ভাল লাগে। নিজের চোখে দেখা পরিবেশের সঙ্গে খুবই মিল পাই।” ক্রিকেটেরও ভক্ত সে। ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে টিভি-র সামনে তাকে বসতেই হবে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়া স্বপ্ন দেখে রেজাউল। ভাল রেজাল্টের রসায়ন কী? রেজাউল বলে, “বাড়িতে পড়তাম। তা ছাড়া, হুড়ায় অঙ্ক, ভৌত বিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানের টিউশন নিতে যেতাম। তবে হুড়া বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে। সাইকেলে যেতে আসতেই অনেকটা সময় চলে যেত।” এত খুশির মাঝেও বাবার কথা মনে করে খানিকটা ভারাক্রান্ত রেজাউল। তার কথায়, “আজ বাবা বেঁচে থাকলে বড্ড খুশি হতেন। বলতেন লেখাপড়া করবি, তবেই তো মানুষ হতে পারবি।”

উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল মাদ্রাসা বোর্ডের ফাজিলে দশম স্থান অধিকার করেছে পুরুলিয়া ২ ব্লকের বাঘড়া ইসলাহুল মোমেনিন সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র আহমেদ রেজা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫০-এর মধ্যে ৫০৩। পুরুলিয়া শহরের ডিগুডি এলাকার বাসিন্দা আহমেদ অবশ্য দিল্লি বেড়াতে গিয়েছে। ব্লকের প্রশাসনিক কর্তাদের মারফত তার পরিবার মঙ্গলবার জানতে পারে আহমেদের ফলের কথা। সন্ধ্যাবেলায় তার বাড়িতেও মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে যায়। আহমেদের বাবা মহম্মদ নূরউল্লা জামশেদপুরে শিক্ষকতা করেন। বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে আহমেদ তার ফল জানতে পারেন। পরে ফোনেই সে জানায়, তার ইচ্ছে আইএএস অফিসার হয়ে পুরুলিয়ার মতো পিছিয়ে পড়া কোনও জেলায় উন্নয়নের কাজ করা।

—নিজস্ব চিত্র।

hura high madrasah exam rejaul ansari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy