রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে সেই চাকরি বড় ছেলেকে দিয়েছিলেন বাবা। সেই সময় ছেলে বাবার ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছিল। অভিযোগ, পরে ছেলে কথা রাখেননি। টাকার অভাবে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃদ্ধ বাবার। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আশি বছরের ওই বৃদ্ধ। শুক্রবার রঘুনাথপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক (এসিজেএম) সন্তোষকুমার পাঠক মামলাটির প্রথম শুনানিতেই ছেলেকে তাঁর বেতন থেকে বাবার ভরনপোষণ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
সকলদেও সাউ নামে ওই বৃদ্ধের আইনজীবী বিকাশ ঘোষাল বলেন, “এ দিন বিচারক মামলাটির রায় দিয়েছেন বাদি-বিবাদি দু’পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে আদালতে আর কোনও আবেদন করা যাবে না।”
বিকাশবাবু জানান, সকলদেও সাউ নিতুড়িয়ায় ইসিএলের পারবেলিয়া কয়লাখনিতে চাকরি করতেন। প্রায় ১৮-১৯ বছর আগে তিনি স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন। পরিবর্তে চাকরি পেয়েছিলেন বড় ছেলে সুরেশ। চাকরি পাওয়ার পরে প্রথম দিকে বাবাকে দেখভাল করতেন সুরেশ। কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেন। পারবেলিয়া এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে আলোচনা করানোর চেষ্টা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর সকলদেওবাবু রঘুনাথপুর আদালতে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভরনপোষণ চেয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন (মিস কেস নম্বর ৯৬/১৩, ১২৫ সিআরপিসি অ্যাক্ট)।
শুক্রবার মামলাটির প্রথম শুনানি হয় এসিজেএম সন্তোষকুমার পাঠকের এজলাসে। শুনানির শুরুতেই বিচারক বাবার প্রতি ছেলের কর্তব্যের কথা উল্লেখ করে সুরেশের প্রতি মন্তব্য করেন, ‘বেতন দিয়ে আপনি আজ যেমন নিজের সন্তানদের ভরনপোষণ করছেন, তেমনিই চাকরি করার সময়ে বাবাও আপনাদের ভরনপোষণ করেছেন। আপনি নিশ্চয় আশা করেন, ভবিষ্যতে আপনার সন্তান আপনাকে দেখবে। একই ভাবে আপনার উচিত, আপনার বাবার ভরনপোষণের ব্যবস্থা করা।’ এর পরেই বিচারক জানতে চান, সকলদেওবাবু যে টাকা ভরনপোষণের জন্য দাবি করেছেন, তা সুরেশ দিতে সম্মত কি না। সুরেশ সাউ সম্মত হওয়ায় বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, সুরেশবাবুর বেতন থেকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা সরাসরি তাঁর বাবার অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য।
বিকাশ ঘোষাল জানান, নিতান্তই বাধ্য হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন সকলদেওবাবু। সমস্ত সঞ্চয় ছেলেদের দেওয়ার পরে কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এ দিন অশীতিপর ওই বৃদ্ধ জানান, স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পরে যে টাকা পেয়েছিলেন, তার পুরোটাই দুই ছেলে সুরেশ ও নরেশকে বাড়ি তৈরি করতে দিয়ে দিয়েছিলেন। সকলদেওবাবুর ক্ষোভ, “পরিবারের এক জন আমার পরিবর্তে চাকরি পাচ্ছে বলে আমি পেনশন পাইনি। অথচ বড় ছেলে কিছুদিন দেখার পরেই অবহেলা করতে শুরু করল। তখন ছোট ছেলের কাছে গিয়ে থাকতে শুরু করি। কিন্তু, নরেশ টিভি সারাইয়ের কাজে সামান্য আয় করে। তাই সুরেশকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দিতে বলেছিলাম। ও রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হই।”
বিচারকের নির্দেশ শোনার পরে বৃদ্ধের প্রতিক্রিয়া, “ওই টাকা পাওয়ার পরে অন্তত খেয়েপরে বাঁচতে পারব।” এ দিন অনেক চেষ্টা করেও সুরেশ সাউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তাঁর আইনজীবী তপন কর বলেন, “এ দিন আমার মক্কেল মামলার শুনানিতে তাঁর বাবাকে মাসে পাঁচ হাজার করে টাকা দিতে রাজি হওয়ায় বিচারক দু’পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে ওই রায় দিয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy