Advertisement
E-Paper

বালির আকাল মেটাতে আর্জি প্রশাসনকে

শিল্প থেকে পর্যটন, রাস্তা নির্মাণ বালির আকালে সব ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। বালির সমস্যায় রঘুনাথপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে.এই আশঙ্কায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে ডিভিসি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৫

শিল্প থেকে পর্যটন, রাস্তা নির্মাণ বালির আকালে সব ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। বালির সমস্যায় রঘুনাথপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে.এই আশঙ্কায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে ডিভিসি। অন্য দিকে, দ্রুত বালির জোগান স্বাভাবিক না হলে জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটন আবাস নির্মাণ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন বলে পূর্ত দফতরকে জানিয়ে দিয়েছে কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থা। একই চিত্র পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক নির্মাণেও। ওই কাজের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা পূর্ত দফতরকে জানিয়েছে বালি না পেলে রাস্তার উপরে কালভার্ট নির্মাণ স্থগিত রাখবে তারা। সব মিলিয়ে বালির আকালে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড স্থগিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায়।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগস্ট মাস থেকেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পরিবর্তে বালি তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেচ দফতরকে। আর সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। বালির ব্যবসায় জড়িত একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, আবেদন করার পরেও স্বল্পমেয়াদী সময়ে লিজ নেওয়া নদীর ঘাট থেকে বালি তোলার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় নদীঘাটের লিজ রয়েছে ২২ জনের কাছে। অগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত মাত্র দু’জনকে বালি তোলার অনুমতি দিয়েছে সেচ দফতর।.আর তার জেরেই মহকুমা জুড়ে শুরু হয়েছে বালির আকাল। শিল্প, পর্যটন, রাস্তা নির্মাণের কাজ করা সংস্থাগুলির দাবি, অন্য জেলা থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে বালি আনতে হচ্ছে। আবার স্থানীয় ভাবে সামান্য পরিমাণে বালি মিললেও এই পরিস্থিতিতে দ্বিগুণ দাম লাগছে কিনতে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বালি না মেলায় সমস্যা ঘোরালো আকার নিয়েছে ডিভিসি-র নির্মীয়মান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কুলিং টাওয়ার নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তা অরিন্দম প্রামাণিক জানান, আগস্ট মাসের প্রথম থেকে বালির জোগান বন্ধ হয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, “স্থানীয় কয়েকজন বালি মজুত করে রেখেছিলেন, তাদের কাছে থেকে প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে বালি কিনে কাজ চালাচ্ছি। কিন্তু এই পরিমাণ বালিতে আর কয়েকটা দিন কাজ চালানো সম্ভব। তারপরে বালি না পেলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

এ দিকে, ডিভিসি রঘুনাথপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে জানুয়ারি মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে কুলিং টাওয়ারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হলে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়। অরিন্দমবাবুর আশঙ্কা, “বালির সমস্যা দ্রুত না মিটলে নির্মাণকাজ শেষ করতে লক্ষ্যমাত্রার থেকে আরও কয়েকমাস পিছিয়ে যাবে। প্রকল্পের গতি শ্লথ হয়ে পড়ায় পুরুলিয়ার জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে পুরো পরিস্থিতি জানিয়েছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।” প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বালির অভাবে প্রকল্পে নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকটি সংস্থা সমস্যায় পড়েছে। এতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন থেকে শুরু করে পুরো প্রকল্প নির্মাণেই এর প্রভাব পড়তে চলেছে। আমরা জেলাশাসককে সমস্যা মেটানোর অনুরোধ জানিয়েছি।”.

ডিভিসি-র পাশাপাশি বালির সমস্যার প্রভাব পড়েছে জয়চণ্ডী পাহাড়ে যুব আবাসের নির্মাণকাজেও। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে যুব আবাসের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু বালির জোগানের অভাবে যে ভাবে ভূগতে হচ্ছে কাজের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাটিকে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সন্দিহান তারা। সংস্থাটির কর্ণধার বরুন ঘোষ বলেন, “যে পরিমাণ বালি মজুত রয়েছে তাতে খুব বেশি হলে ১০-১২ দিন কাজ চলবে। স্থানীয় ভাবে বালি পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য পরিমাণে বালি মিললেও দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দ্রুত বালির জোগান স্বাভাবিক না হলে কাজ বন্ধ করা ছাড়া গতি নেই।”

একই কথা জানিয়েছেন পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মকর্তা অনুপম গোস্বামীও। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রাজ্য সড়কের উপরে ৩৩টি কালভার্টের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কালভার্ট তৈরির কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু বালির সমস্যায় ভুগছে সংস্থাটি। অনুপমবাবু বলেন, “বর্ধমান থেকে কিছু পরিমাণ বালি এনে কাজ চালাচ্ছি। কিন্তু তাতে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে স্থানীয় ভাবে বালি না মিললে বাকি কালভার্টগুলির নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।” পূর্ত দফতরের রঘুনাথপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “পর্যটন কেন্দ্র এবং রাস্তার কাজের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থাগুলি জানিয়েছে বালির সমস্যায় নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “এ নিয়ে আমি সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”

sand subhaprakash mondal raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy