তৃণমূলের বস্ত্রবিতরণ অনুষ্ঠান দু’টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠল। এর জেরে পোস্টার পড়ল এলাকায়। অনুষ্ঠান বয়কট করলেন এক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুরের ঘটনা।
মহালয়া উপলক্ষে এ দিন তৃণমূলের একটি কার্যালয়ের উদ্বোধন ও বস্ত্রবিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র বিলি করার পর থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। আমন্ত্রণপত্রে ‘লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস’ ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ‘আইএনটিটিইউসি’ যৌথ ভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমন্ত্রক হিসেবে কেবল মাত্র আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক স্বপন বাউরির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিমাই মাজি-র নাম আমন্ত্রণ পত্রে কোথাও লেখা নেই।
এর প্রতিবাদে দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র কাছে কিছু দিন আগে অভিযোগ জানান নিমাইবাবুর অনুগামীরা। অনুষ্ঠান বয়কট করার হুমকিও দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, কাজটি ভাল করেননি বলে অনেক জেলা নেতা স্বপনবাবুকে সতর্ক করে নিমাইবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও স্বপনবাবু নিমাইবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাননি বলে অভিযোগ তৃণমূলের একাংশের। এ দিন সকালে ‘লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসে’র তরফে এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে ও প্রচারপত্র বিলি করে আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হয়। এ দিনের অনুষ্ঠানের নামে তোলাবাজি করা হয়েছে বলেও পোস্টারে অভিযোগ করা হয়। পরে স্বপনবাবুর অনুগামীরা পোস্টারগুলি ছুঁড়ে ফেলে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। অনুষ্ঠানেও নিমাইবাবু ও তাঁর অনুগামীদের দেখা যায়নি।
কয়েক মাস আগেই গঙ্গাজলঘাটির তত্কালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তীর (বর্তমানে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে) বিরুদ্ধে। নিমাইবাবুর অনুগামীরা এককাট্টা হয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর দাবি তুলেছিলেন। প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির কাজে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। এ বার স্বপনবাবুর নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি-র ব্যানারে অনুষ্ঠানের নামে তোলাবাজিরও অভিযোগ উঠল।
অনুষ্ঠানে এসে এ হেন পোস্টার দেখে রীতিমতো বিব্রত হয়ে পড়েন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। অনুষ্ঠান শেষে তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে খানিকটা বিরক্ত হয়েই তিনি বলেন, “যাঁরা এই পোস্টার দিয়েছে তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।” লটিয়াবনি অঞ্চল কমিটির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে অঞ্চল সভাপতির নাম নেই কেন? তাঁর জবাব, “এটা একান্ত ভাবেই আইএনটিটিইউসি-র অনুষ্ঠান। তাই কারও নাম নাও থাকতে পারে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপারই নেই এখানে।” তা হলে যে আইএনটিটিইউসি-র সঙ্গে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম রয়েছে? প্রশ্ন শুনেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যান তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বপনবাবু। পরে তিনি বলেন, “এটা যৌথ অনুষ্ঠান। কিন্তু সবার নাম একটা আমন্ত্রণপত্রে দেওয়া সম্ভব নয়।”
এ দিকে পোস্টার সাঁটানোর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করছেন নিমাইমাবাবু। তাঁর বক্তব্য, “কারা পোস্টার দিয়েছে জানি না। এর সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই।” দলীয় অনুষ্ঠানে কেন যাননি? তিনি বলেন, “দলের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাই না। যা বলার দলের নেতাদের বলেছি।”
—নিজস্ব চিত্র।