Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও জঙ্গলমহলে চালুই হল না হোম-ট্যুরিজম

পুরুলিয়ায় এলেই প্রতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ফিরে ফিরে আসে রূপসী পুরুলিয়ার পযর্টন সম্ভাবনার কথা। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি পুরুলিয়ায় এসে পযর্টন-মানচিত্রে পুরুলিয়াকে কী ভাবে আরও তুলে ধরা যায়, কী ভাবে তিনি সাজাতে চান সে প্রসঙ্গ বারবার তুলেছেন।

দূরে আকাশের গায়ে অযোধ্যাপাহাড়ের সারি। পর্যটকদের অপেক্ষায় বাঘমুণ্ডির লোয়াকুই গ্রাম। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

দূরে আকাশের গায়ে অযোধ্যাপাহাড়ের সারি। পর্যটকদের অপেক্ষায় বাঘমুণ্ডির লোয়াকুই গ্রাম। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

প্রশান্ত পাল
বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৮
Share: Save:

পুরুলিয়ায় এলেই প্রতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ফিরে ফিরে আসে রূপসী পুরুলিয়ার পযর্টন সম্ভাবনার কথা। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি পুরুলিয়ায় এসে পযর্টন-মানচিত্রে পুরুলিয়াকে কী ভাবে আরও তুলে ধরা যায়, কী ভাবে তিনি সাজাতে চান সে প্রসঙ্গ বারবার তুলেছেন। বছর খানেক আগে পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়ায় প্রকাশ্য প্রশাসনিক সভা থেকে জেলার গড়পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড়, তেলকূপি, পাকবিড়রা, বড়ন্তি এবং অযোধ্যাপাহাড়ে পযর্টন শিল্প গড়ে তোলার পাশাপাশি দার্জিলিঙের আদলে এই জেলাতেও হোম-ট্যুরিজম ( যে ঘরে পর্যটকদের রাখা হবে তাকে হোম স্টে বলে) শিল্প গড়া হবে বলে তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন।

দার্জিলিঙে যে ভাবে এই শিল্প সেখানকার মানুষজনকে বিকল্প আয়ের পথ দেখিয়েছে, সেই ভাবে হোম-ট্যুরিজম পুরুলিয়ার মানুষজনকেও বিকল্প আয়ের সন্ধান দেবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যেই এই শিল্প এখানে গড়ে উঠতে পারে বলে তিনি জানান। কিন্তু এখনও মুখ্যমন্ত্রীর সেই ভাবনার রূপ দিতে প্রকল্প রিপোর্টই তৈরি করে উঠতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে হুটমুড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে বাঘমুণ্ডি ব্লকের লোয়াকুই গ্রামকে ঘিরে হোম-ট্যুরিজম শিল্প গড়ে তোলা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এখানে প্রকল্প সফল হলে অন্যত্রও এই প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। আশা ভরসায় ছিলেন লোয়াকুইয়ের বাসিন্দারাও। কিন্তু দু’বছর পরে ফের পর্যটনের মুরসুম সামনে এসে পড়লেও সেই প্রশাসনিক ভাবনা বাস্তবের চেহারা পায়নি। তাই হতাশ বাসিন্দারাও। হতাশ প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকেরাও।

লোয়াকুই গ্রামটির অবস্থান বাঘমুণ্ডির মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বাঘমুণ্ডি-বলরামপুর রাস্তার উপর দুয়ারসিনি মোড় থেকে ঘন জঙ্গলের মোরাম রাস্তা ধরে এক কিলোমিটার পথ পেরোলেই লোয়াকুই গ্রাম। আক্ষরিক অর্থেই ছবির মতো শাল-পলাশ ঘেরা গ্রাম। দূরে অযোধ্যাপাহাড়ের রেঞ্জ। গ্রামের পাশ দিয়ে তির তির করে বইছে একটি ছোট জোড়ের জল। এই গ্রামে ওয়াচ টাওয়ার, পযর্টকদের থাকার জন্য কটেজ, রাস্তাঘাট-সহ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে লোয়াকুই গ্রামে হোম-ট্যুরিজমের জন্য এই সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন তত্‌কালীন পর্যটন সচিব বিক্রম সেন। তারপর থেকে ফাইল বন্দি হয়েই পড়ে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প।

হোমস্টে কী

গ্রামের কয়েকটি বাড়ি বেছে নিয়ে ন্যূনতম আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হবে। সেখানেই পর্যটকরা থাকবেন।
খাবারও পাবেন। পুরোটাই পরিচালনা করবেন গৃহকর্তারা। নজর রাখবে প্রশাসন। এর ফলে পর্যটকদের বাড়িতে রেখে
যথেষ্ট আয়ের সম্ভাবনা থাকবে গৃহস্থের। পাশাপাশি পর্যটকেরাও প্রকৃতির মধ্যে ওই এলাকার বাসিন্দারা
যে পরিবেশে থাকেন, যে জীবনযাত্রা পালন করেন, তার স্বাদও পাবেন।

পরেও মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ায় এসে জানিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা ফের এই জেলার পাহাড়গুলিতে আরও বেশি করে ট্রেকিং শুরু হোক। কটেজ তৈরি করা হোক। এর ফলে এখানকার ছেলেমেয়েরা কাজ পাবে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে এলাকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেরও বিকাশ হবে। কিন্তু সেই কাজ কি এগিয়েছে?

তৃণমূলের স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রমণীবালা মাহাতো বলেন, “শুনেছিলাম এখানে পর্যটকদের জন্য কিছু একটা প্রকল্প হবে। আর কিছু জানি না।” স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মাহাতোর কথায়, “বেশ কিছুদিন আগে শুনেছিলাম এখানে কটেজ, রাস্তা আরও কিছু হবে। এলাকার ছবিটাই নাকি বদলে যাবে। কিন্তু কোথায় কী! কিছুই তো হয়নি।” মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বুধু মান্ডি বলেন, “লোয়াকুই গ্রামে পযর্টকদের জন্য কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের কাছে কোনও খবর নেই।” বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অবনীভূষণ সিংহও জানান, হোম-ট্যুরিজম নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে বলে শুনেছিলেন। তার বেশি কিছু জানেন না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য পর্যটন দফতরে আমরা লোয়াকুই গ্রামে হোম-ট্যুরিজমের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। স্বনির্ভর বিভাগকেও প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। যারা উত্‌সাহ দেখাবে, তাদেরই কাজ করতে বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

home stay home tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE