Advertisement
E-Paper

যানজটের জালেই রুদ্ধ শহর

পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হয়েছে। নামি দামি ব্র্যান্ডের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুম থেকে অত্যাধুনিক হোটেল। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তা পরিধি বেড়ে জাতীয় সড়কেও পরিণত হয়েছে। স্থাপিত হয়েছে কলেজও। কিন্তু এত কিছুর পরেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে রেলগেট পড়লেই স্তব্ধ হয়ে যায় নলহাটি শহর!

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩২
রোজকার দৃশ্য। নলহাটির রেলগেটের দু’পাশে যানজট। যার ধাক্কা পড়েছে নলহাটির বাইপাসেও। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক। ছবি: অনির্বাণ সেন।

রোজকার দৃশ্য। নলহাটির রেলগেটের দু’পাশে যানজট। যার ধাক্কা পড়েছে নলহাটির বাইপাসেও। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক। ছবি: অনির্বাণ সেন।

পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হয়েছে। নামি দামি ব্র্যান্ডের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুম থেকে অত্যাধুনিক হোটেল। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তা পরিধি বেড়ে জাতীয় সড়কেও পরিণত হয়েছে। স্থাপিত হয়েছে কলেজও। কিন্তু এত কিছুর পরেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে রেলগেট পড়লেই স্তব্ধ হয়ে যায় নলহাটি শহর!

এই শহরে একটু ঘুরলেই দেখা যায়, রাস্তার উপরে যত্রতত্র ছোট ব্যবসায়ীরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। সেই সঙ্গে রাস্তা দখল করে সাজানো বড় বড় দোকানদারদের জিনিসপত্রও। শহরের নেতাজি মোড় থেকে মৌচাক মোড়, রেলগেট, পোস্ট অফিস মোড় প্রত্যেকটির সঙ্গে জুড়ে থাকা পথগুলির এটাই প্রতিদিনের দৃশ্য। আজকের দিনে যানজটই জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর নলহাটির সব থেকে বড় সমস্যা।

বস্তুত, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে শহর। রীতিমতো যুদ্ধ করে যানজট ঠেলতে ঠেলতে যাতায়াত করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। ওই যানজটের জন্য সিংহভাগ বাসিন্দাই রাস্তার উপরে সব্জি বাজার, ফলের দোকান এবং বেদখল হয়ে থাকা ফুতপাতকে দায়ী করছেন। সাইকেল, মোটরবাইক, যন্ত্রচালিত রিকশা, গরুর গাড়ি, সবই যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবাদ করলে মারামারি অবধি লেগে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম দত্ত বলছেন, “সব্জি হাটের জন্য আলাদা জায়গা আছে। অথচ হাট মালিকদের পরিকল্পনার অভাবে যাতায়াতের রাস্তার উপর বাজার বসছে।” বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, হাট মালিকদের পাশাপাশি এলাকার দোকানদের সঙ্গে একটি অলিখিত আর্থিক সমঝোতা আছে। যে কারণে লাভের আশায় যে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাস্তায় বসেন, তাঁরাও হাট মালিক এবং দোকানদের একাংশকে তোলা দিতে দ্বিধা করেন না। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, পাইকারি বা খুচরো বাজারে সব্জি বিক্রি করার জন্য রাত ৩টে থেকে গরুর গাড়ি, যন্ত্র চালিত রিকশা, ট্রাক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তখন থেকেই তোলাবাজি শুরু হয়। এই সব ঠেলে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরতে এসে জেরবার হন বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ।

সব্জি বাজারের মতোই এক কাহিনী রেলগেট এলাকাতেও। রেলগেট এলাকার যানযট এ শহরের দীর্ঘ দিনের যন্ত্রণা। যানযটের এই জেরবার-চিত্র টের পেয়েছিলেন ভোট প্রচারে আসা রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। গলদঘর্ম অবস্থায় রোড শো থামিয়ে তাঁকে দীর্ঘ ক্ষণ রেলগেট খোলার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল। এই রেলগেট পড়ে গেলে আজও নলহাটি শহর দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এলাকাবাসী থেকে নিত্যযাত্রী বা সাধারণ নাগরিক যাঁরাই বিভিন্ন কাজের সূত্রে এই শহরে আসেন, রেলগেটের যানজটে পড়ে নাকাল হতেই হয়। অথচ প্রধান রেল ফটকের পশ্চিম দিকেই পুরসভার ভবন, স্কুল, নলহাটি ১ ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়, থানা, নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ অফিস আছে। আবার পূর্ব দিকে নলহাটি বাজার, বাসস্ট্যান্ড, নলহাটি কলেজ। বাসিন্দারা জানান, ট্রেন যাতায়াতের কারণে প্রায় আধ ঘণ্টা অন্তর রেল ফটক পড়ে যানজট তৈরি হয়। এমনকী, অনেক সময় আটকা পড়ে রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুল্যান্সও আটকে পড়ে। শহরবাসীর ক্ষোভ, রেল লাইনের উপর তিনটি রেল ফটক এখনও নলহাটির গতিকে স্তব্ধ করে রেখেছে। একই হাল এলাকার সার্বিক উন্নয়নেও।

এ দিকে, হাট মালিকদের পক্ষে নলহাটির প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান প্রকাশ প্রসাদ বলেন, “হাটের জায়গা আছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বহু বার রাস্তা থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওঁরা অন্য কোথায় সুনিশ্চিত ভাবে ব্যবসা করবেন, তার ভরসা পাচ্ছেন না। ওঁরা তাই রাস্তা দখল করেই ব্যবসা চালু রেখেছেন।” বাসিন্দাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রকাশবাবুর দাবি, ওই ব্যবসা করার জন্য হাট মালিকদের কেউ পয়সা দেন না। কেবল মাত্র হাটের জায়গায় যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হয়। অবৈধ দখলদারি রুখতে পুরসভাই বা কী করছে? তৃণমূল পুরপ্রধান রাজু সিংহের বক্তব্য, “এ নিয়ে মৌখিক ভাবে প্রশাসন এবং হাট মালিকদের বলা হয়েছে। রাস্তার উপর বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একাধিক বার সরে যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। কালীপুজোর পর আবার সকলে বসবো। দেখা যাক কী হয়।”

রেলগেট সমস্যা মেটানোর জন্য কয়েক যুগ ধরে একটি রেল ওভার ব্রিজ তৈরির দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তা নিয়ে ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু আজও এ নিয়ে কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। রাজুবাবু বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত ওই রেল ওভার ব্রিজ নিয়ে সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। তা ছাড়া জমি সংক্রান্ত সমস্যাও আছে।” এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য মেলেনি। বারবার ফোন করা হলেও পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।

apurba chattopadhyay nalhati traffic problems traffic jam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy