রাতের শহরে মেলা একমাত্র বাহন হিসেবে যা ইচ্ছে তাই ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ ছিলই। সঙ্গে যোগ হয়েছে চালকদের দুর্ব্যবহারের নালিশ। সব মিলিয়ে রিকশা নিয়ে পুরুলিয়া শহরবাসীর অভিজ্ঞতা খুব মধুর বলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে শহরে চলাচলকারী রিকশার ঠিকঠাক ভাড়া বেঁধে দেওয়ার দাবিতে পথে নেমেছে নাগরিকদের সংগঠন ‘পুরুলিয়া নাগরিক মঞ্চ’। রিকশার ভাড়া নির্ধারণের সঙ্গেই প্রশাসনের কাছে অটো পরিষেবা চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবিও তুলেছে তারা।
শহরে রিকশা ভাড়া নির্ধারিত করার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্য পর্যন্ত রিকশাভাড়া ঠিক করে দিয়েছিল। রিকশা চালকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পরে পুরুলিয়া রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা বিভিন্ন রিকশাস্ট্যান্ডে সেই ভাড়ার তালিকাও লাগানো হয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েক সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হলেও, পরে সে ব্যবস্থা উঠে যায়। ভাড়া লেখা সাইনবোর্ডগুলিও উধাও হয়ে যায়। ‘নাগরিক মঞ্চ’-এর সহ-সভাপতি তথা শহরের প্রাক্তন পুরপিতা গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেই সময় রাতে বেশি ভাড়া দিতে হবে এ রকমও উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু দিন কয়েক পরে ফের যে-কে-সেই।. কে মানে কার কথা?” মঞ্চ-এর সম্পাদক প্রদীপকুমার কুণ্ডু বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।”
পুরুলিয়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা চার হাজারের কিছু বেশি। তবে শহরে তার থেকে অন্তত হাজার তিনেক বেশি রিকশা চলে বলে দাবি ‘নাগরিক মঞ্চ’-এর। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় মেনে নিয়েছেন, শহরে লাইসেন্সবিহীন রিকশা রয়েছে। তবে তিনি বলেন, “তাদের সংখ্যা কত, তার ঠিকঠাক হিসেব আমাদের কাছে নেই।”
সিটু নিয়ন্ত্রিত রিকশা চালকদের একটি সংগঠনের মুখপাত্র তথা শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান বিনায়ক ভট্টচার্য বলেন, “মওকা বুঝে কিছু রিকশাচালক বাড়তি ভাড়া হাঁকেন। কিছু রিকশাচালক কখনও কখনও যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার যে করেন না, তা-ও নয়।” তাঁর বক্তব্য, “আমরাও চাই, রিকশাভাড়া নির্ধারিত করা হোক। তবে সেটা করা দরকার বাজার দরের সঙ্গে সাজুয্য রেখে। আর সব রিকশাকেই লাইসেন্স দেওয়া হোক।. তা হলে কোনও ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়ে যাওয়ার পরে, কে তা মানছে না তা চিহ্ণিত করা সহজ হবে।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন নিয়ন্ত্রিত রিকশা চালকদের সংগঠনের মুখপাত্র শেখ বাবলু বলেন, “আমরা ভাড়া নির্দিষ্ট করার এবং বিধি মানারই পক্ষে। এ বার যদি ভাড়া নির্ধারিত হয়, আমরা সহায়তা করব. আর রিকশাচালকেরা যাতে সেই ব্যবস্থা মানেন তা দেখব।” বিনায়কবাবুর মতো তিনিও. বাজার দরের সঙ্গে মানানসই ভাবে ভাড়া বাড়ানো তথা বেঁধে দেওয়ার পক্ষপাতী। একই বক্তব্য ইউটিইউসি অনুমোদিত রিকশাচালকদের সংগঠনের মুখপাত্র রঙ্গলাল কুমারের। তিনিও বলেছেন, “ওই ভাবে ভাড়া বাড়ানো হলেও যদি কোনও রিকশাচালক তা না মানেন, তবে আমরা তাঁর পাশে থাকব না।”
তবে এই মুহূর্তে শহরে অটো-পরিষেবা চালু করা নিয়ে ভিন্নমত রিকশাচালকদের সংগঠনগুলি। শেখ বাবলুর বক্তব্য, “অটো পরিষেবা শুরু হতেই পারে। তবে তা দূরের যাত্রীদের জন্য চালু হোক।” রঙ্গলাল কুমার বলেছেন, “আমরা শহরে অটো চালানোর পক্ষে নই। অটো পরিষেবা চালু হলে বহু রিকশাচালক রুজি হারাবেন। তাঁদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে প্রশাসন অটো পরিষেবা শুরু করলে আপত্তি নেই।” আর বিনায়ক ভট্টাচার্যের মত, “অটো কেন? প্রয়োজনে ব্যাটারি-চালিত রিকশা শহরে নামানো হোক। তাতে রিকশাচালকদের পরিশ্রম কমবে। দূষণও হবে না”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার বলেন, “নাগরিক মঞ্চের দাবিগুলি রূপায়ণের জন্য পুরসভা-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। দেখছি, কী করা যায়।”. পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ওই দাবিগুলির কথা আমরাও জানি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy