এই প্যাকেট নিয়েই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র
গরমে ট্রেনের চালক, গার্ড ও গ্যাংম্যানদের ‘ওআরএস’ দেওয়া শুরু করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশন। চাহিদার তুলনায় কম প্যাকেট মিলছে, এই মর্মে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার মেয়াদ উত্তীর্ণ ওআরএসের প্যাকেট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কয়েকটি দফতর (ইউনিট) থেকে রেলকর্মীদের যে প্যাকেটগুলি দেওয়া হয়েছে, তার মেয়াদ তিন মাস আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেসের। বুধবার আদ্রার ডিআরএমের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও জানিয়েছে সংগঠনটি। ডিআরএম অরবিন্দ মিত্তল বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।
রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ-সহ রেলগেট দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা এবং ট্রেনের চালক ও গার্ডদের ওআরএস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আদ্রা ডিভিশন। যদিও মেনস কংগ্রেসের দাবি, রেল কর্তপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে টালবাহানা করছিল। তাদের চাপেই এপ্রিল মাস থেকে রেলের ‘ফিল্ড ওয়ার্কার’-দের ওআরএসের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের তরফে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল, চাহিদার তুলনায় অনেক কম সংখ্যায় প্যাকেট সরবরাহ করছে রেল। এ বার যোগ হয়েছে অন্য অভিযোগ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকটি দফতর থেকে ট্র্যাকম্যানদের সম্প্রতি যে প্যাকেটগুলি দেওয়া হয়েছে, সেগুলির মেয়াদ তিন মাস আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। মেন্স কংগ্রেসের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বহু সংখ্যক প্যাকেটের মেয়াদ মার্চ মাসেই উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। অথচ রেলকর্তৃপক্ষ সেই প্যাকেটগুলিই দিচ্ছেন কর্মীদের। আমরা ডিআরএমের কাছে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”
আদ্রা ডিভিশনে ইঞ্জিনের চালক, গার্ড এবং গ্যাংম্যান মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার রেলকর্মী রয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাজে যাওয়ার আগে নিজস্ব দফতর থেকে ওআরএসের প্যাকেট সংগ্রহ করে নেবেন কর্মীরা। প্রতি কর্মীর জন্য বরাদ্দ দৈনিক একটি প্যাকেট। সেই মতো দৈনিক অন্তত তিন হাজার ওআরএসের প্যাকেট সরবরাহ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ, চাহিদার অর্ধেকও দিতে পারছে রেল কর্তৃপক্ষ। মেনস কংগ্রেসের আদ্রা ডিভিশনের নেতা সুব্রত দের দাবি, “চাহিদা অনুযায়ী ওআরএস দেওয়ার দাবি আগেই জানানো হয়েছিল। অথচ সমস্যার সুরাহা হয়নি। বরং কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। অনেক কর্মীই সময়সীমা না দেখে ব্যবহার করে ফেলেছেন।” মেয়াদ উত্তীর্ণ ওআরএস ব্যবহার করে আশঙ্কায় ভুগছেন একাধিক রেলকর্মী। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যাকেট সরবরাহ করার ক্ষেত্রে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এই রেলকর্মী সংগঠনটি।
রেল সূত্রের খবর, কর্মীদের ওআরএসের প্যাকেট মূলত সরবরাহ করছে রেলের স্বাস্থ্যবিভাগ। ফলে ওই দফতরের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। সূত্রের খবর, বুধবার অভিযোগ পেয়ে আদ্রার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছেন ডিআরএম। রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, আদ্রা ডিভিশনে ওআরএসের প্যাকেট সরবারহ করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর থেকে। কিন্তু, সেখান থেকে বছরে মাত্র ৬০ হাজার প্যাকেট আসে আদ্রায়। গরমের সময়ে কর্মীদের দেওয়ার জন্য প্যাকেটের চাহিদা বাড়ায় স্থানীয় ভাবে কিছু প্যাকেট যেমন কিনছে আদ্রার স্বাস্থ্য দফতর, তেমনই কিছু বিভাগ কর্মীদের ওআরএস দিতে নিজস্ব তহবিল থেকে প্যাকেট কিনছে। ফলে, ঠিক কোন উৎস থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যাকেট এসেছে, নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। আদ্রার চিফ মেডিক্যাল সুপার বি পি নন্দর দাবি, “স্বাস্থ্য দফতর থেকে সরবরাহ করা প্যাকেটগুলির ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হতে দেরি আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy