Advertisement
E-Paper

লিফলেটে ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে তোপ

পাত্রসায়র, গঙ্গাজলঘাটি, রাইপুরতালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। বাঁকুড়ায় শাসকদলের নিজেদের দ্বন্দ্বে দীর্ণ ব্লকের নামের তালিকা। সেই তালিকায় জুড়ল শালতোড়ার নামও। দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায় জেলায় জেলায় গিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামানোর বার্তা দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৫

পাত্রসায়র, গঙ্গাজলঘাটি, রাইপুরতালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। বাঁকুড়ায় শাসকদলের নিজেদের দ্বন্দ্বে দীর্ণ ব্লকের নামের তালিকা। সেই তালিকায় জুড়ল শালতোড়ার নামও।

দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায় জেলায় জেলায় গিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামানোর বার্তা দিচ্ছেন। বাঁকুড়ায় তখন উল্টো ছবি। তৃণমূলের শালতোড়া ব্লক সভাপতি কালীপদ রায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন এই ব্লকের তিলুড়ি অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি ব্লক পার্টি অফিসে এক কর্মিসভায় তপনবাবুকে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে তিলুড়ির বাসিন্দা উজ্বল মিশ্রকে সেই দায়িত্ব দেন কালীপদবাবু। তৃণমূলের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে তিলুড়ি অঞ্চলে ভাল ফল হয়নি দলের। তার জন্যই ওই পদক্ষেপ।

এতেই বেজায় চটেছেন তপনবাবু। রীতিমতো লিফলেট ছাপিয়ে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন তিনি। লিফলেটে দাবি করেছেন, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে শুধুমাত্র তিলুড়ি অঞ্চলকে বঞ্চনা করা হয়েছে। আর তার জেরেই নাকি ভোটের ফল খারাপ হয়েছে এলাকায়! এই ঘটনার জন্য কালীপদবাবুকেই দায়ী করেছেন তপনবাবু। পাশাপাশি তাঁকে অন্যায় ভাবে পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন। তপনবাবুর সেই লিফলেট তৃণমূল কর্মীদের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। দলের দ্বন্দ্ব এ ভাবে প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।

তপনবাবু লিফলেটে যে-সব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের টাকায় তিলুড়িতে কোনও প্রকল্প হয়নি, শালতোড়া-মধুকুন্ডা রাস্তা মেরামতি না হওয়া, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার অনুদান এই অঞ্চলে দেওয়া হয়নি, ইতুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মানোন্নয়ন না হওয়া, বিধায়ক তহবিলেরর টাকায় গত তিন বছরে একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা ছাড়া এই অঞ্চলে আর কোনও উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ খরচ হয়নি। তপনবাবুর দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় এসে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের দলের নেতারা। কিন্তু ভোটের পরে উন্নয়নের কাজই হল না। যার ফল মিলেছে লোকসভা ভোটে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিলুড়ি অঞ্চলে প্রায় ১৮৭০ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সেখানে লোকসভায় ‘লিড’ মাত্র ২৩৩ ভোটের! এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এত ভোট কমে যাওয়াতেই তপনবাবুর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন দলের একাংশ। যদিও তপনবাবুর দাবি, “এলাকায় উন্নয়ন না হওয়াতেই মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন। আমি ভোটের আগে বিষয়টি দলের বৈঠকে বারবার তুলেছিলাম। কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু, আমার কথায় কেউ সাড়া দেয়নি।” অশনি সঙ্কেত দেখেও ব্লক সভাপতি এলাকায় উন্নয়ন না করায় খারাপ ফলের দায় শেষ পর্যন্ত তাঁকেই নিতে হবে বলে লিফলেটে উল্লেখ করেছেন তপনবাবু। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, এলাকায় দলবাজি শুরু করেছেন ব্লক সভাপতি। তাঁকে অন্যায় ভাবে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে তিনি সরিয়ে দিলেন।

ব্লক সভাপতি কালীপদবাবু অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করব না।” তবে, গোটা ঘটনায় তপনবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শালতোড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউরি। তিনি বলেন, “ভোটে খারাপ ফল হলে সভাপতি পরিবর্তন করাই নিয়ম শালতোড়া ব্লকে। সেই নিয়ম মেনেই তপনবাবুকে সরানো হয়েছে। এ ভাবে লিফলেট বিলি করে দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা তাঁর ঠিক হয়নি।”

একই সঙ্গে তপনবাবুর তোলা অনুন্নয়ন ও অন্যায় ভাবে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন জানিয়ে বিধায়কের দাবি, শালতোড়া ব্লক জুড়েই সার্বিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তিলুড়িকে কোনও ভাবেই বঞ্চনা করা হয়নি। তিনি বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকায় মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। বছরে ৬০ লক্ষ টাকা বিধায়ক তহবিলে পাই। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে করে সব অঞ্চলেই সেই টাকা দেওয়া হয়।”

স্বপনবাবু জানান, শালতোড়া-মধুকুন্ডা রাস্তায় আপাতত তাপ্পি মারা হয়েছে। দ্রুত ওই রাস্তা পূর্ণ সংস্কার হবে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের নানা প্রকল্পের কাজও এই ব্লকে চলছে বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সার্বিক ভাবে গোটা ব্লকই সুফল পাবে বলে আশ্বাস তাঁর।

tmc group clash bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy