Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
রামপুরহাট

শিশু বরযাত্রী সহ মৃত্যু ৫ জনের

বিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে লরির সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় চার বছরের এক শিশু-সহ মৃত্যু হল পাঁচ জনের। শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কে, ভল্লা ক্যানেল মোড় এবং কাবিলপুর গ্রামের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর জখম চার জনকে বর্ধমান মেডিক্যালে এবং আড়াই বছরের এক শিশু ও তার মা রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শোকার্ত পরিবার। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

শোকার্ত পরিবার। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৫
Share: Save:

বিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে লরির সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় চার বছরের এক শিশু-সহ মৃত্যু হল পাঁচ জনের। শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কে, ভল্লা ক্যানেল মোড় এবং কাবিলপুর গ্রামের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর জখম চার জনকে বর্ধমান মেডিক্যালে এবং আড়াই বছরের এক শিশু ও তার মা রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মৃতেরা হলেন গাড়ির চালক অমিত কোনাই (২৫)। বাড়ি রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়া দিঘিরপাড় এলাকায়। বরযাত্রী সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকার বাসিন্দা রাজদীপ বড়াল (১২), রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় মৃন্ময় সেন নামে এক ১৬ বছরের কিশোরের এবং রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা যান পূজা দে (২৬) এবং তাঁর চার বছরের মেয়ে জুঁই। সকলের বাড়ি সাঁইথিয়া রবীন্দ্রপল্লি এলাকায়। পুলিশ লরিটি আটক করেছে। চালক ও খালাসি পলাতক। এ দিকে, জাতীয় সড়কে এই দুর্ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রামপুরহাট থেকে দমকল কর্মীরা আহত এবং মৃতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। রামপুরহাট থানা থেকে পুলিশ এসে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বরযাত্রীদের গাড়িটির ভাঙা কাচ প্রায় ২০ মিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে আছে। ইঞ্জিনের সামনের অংশটি মুখথুবড়ে আছে। ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ ঘিরে মানুষের জটলা। প্রত্যক্ষদর্শী ইটভাটার শ্রমিকেরা ও এক গাড়ির চালক জানালেন, রামপুরহাট অভিমুখে একটি খালি লরি যাচ্ছিল। অন্য দিক থেকে নলহাটি অভিমুখে বিয়েবাড়ি’র গাড়িটি যাচ্ছিল। আচমকা প্রচন্ড শব্দ হয়। গিয়ে দেখেন, যাত্রী বোঝাই গাড়ি সামান্য দূরে গিয়ে উল্টে দিকে ঘুরে গিয়েছে। চালক এবং চালকের পাশে থাকা এক কিশোরের মাথা ফেটে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশ এলাকা থেকে লোকজন এসে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন। অন্য দিকে, খালি লরিটি’র সামনের চাকা খুলে গিয়ে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে মাঠের দিকে মেনে গিয়েছে। ততক্ষণে লরির চালক ও এক কর্মী মাঠ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঁইথিয়ার বাসিন্দা প্রিয়া দে বললেন, “মাড়গ্রাম থানার বিষ্ণুপুর থেকে গাড়িতে করে নলহাটির তেজহাটিতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। আচমকা সব কেমন যেন হয়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারলাম না।” দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে আসেন পাত্র বিষ্ণুপুরের পশ্চিম পাড়ার বছর তিরিশের যুবক চন্দন সেন। হাসপাতালে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানালেন, নলহাটির তেজহাটিতে স্থানীয় মদনমোহন মন্দিরে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে তিনটে গাড়িতে সকালে তেজহাটিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁদের গাড়িটা আগে ছিল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে তাঁর ভাগ্নে, জামাইবাবু ও অন্য আত্মীয়রা ছিলেন। তিনি বলেন, “জাতীয় সড়ক ধরে তেজহাটি ঢোকার আগে লক্ষ্মীবাটি মোড় গিয়ে আমাদের গাড়িটি দাঁড় করিয়ে অন্য গাড়িগুলির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের গাড়ির চালক খবর পান, ভল্লা ক্যানাল এবং বিনোদপুরের মাঝে একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তারপরে তো এই অবস্থা! এখন যে কী হবে কিছুই উঠতে পারছি না!”

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে ছুটে আসেন তেজহাটি গ্রামের পাত্রীপক্ষও। পাত্রীর বাবা ব্রজকৃষ্ণ কর্মকার বলেন, “গ্রামের মন্দিরে মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। বরযাত্রীদের আপ্যায়ণের প্রস্তুতি চলছিল। মাঝে শুনি এই ঘটনা। ভেবে কুল পাচ্ছি না।” বিয়ে করতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোর কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। দুই পরিবারে শোকের ছায়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rampurhat accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE