বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙে যায় ময়ূরেশ্বরের এই সেতুটি। ছবি: অনির্বাণ সেন।
একটি জীর্ণ সেতু। অভিযোগ, সেই সেতুটিরই সংস্কারের দায়িত্ব কার, তা নিয়েই চলছিল দুই দফতরে টানাপোড়েন। তাই ভেঙে পড়ার পরে দু’বছর কেটে গেলেও সেতুটি আর সংস্কারের মুখ দেখেনি। তখন ‘বিপজ্জনক সেতু’র নোটিস টাঙিয়েই দায় সেরেছিল প্রশাসন। তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা একসময় নিজেরাই জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে কোনও রকমে সেটিকে চলাচলের যোগ্য করে তুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ফের ওই সেতুটি ভেঙে পড়ায় পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার শিবগ্রাম-ষাটপলসা সড়ক। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়ায় এলাকার নানা অংশের মানুষ যেমন অসুবিধায় পড়েছেন, তেমনই চরম বিপাকে পড়েছেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। সেতু ভেঙে পড়ায় ঘুরপথে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। গোটা ঘটনায় মানুষের এমন দুরাবস্থার নেপথ্যে প্রশাসনের ঢিলেমি আর অনীহাকেই দায়ী করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তাঁদের দাবি, বারবার আবেদন জানিয়েও সংস্কার বা নতুন করে সেতু নির্মাণ করার কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিরিশ আগে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি তৈরি হয়। রাস্তার অন্তর্গত স্থানীয় ভগবতীপুর গ্রাম সংলগ্ন ময়ূরাক্ষী সেচ খালের উপর একটি ছোট সেতু ছিল। কিন্তু রাস্তা তৈরির সময় পুরনো ওই সেতুটি নতুন করে সারানো কিংবা তৈরি করা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পরে প্রাচীন সেতুটি ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে। বছর দু’য়েক আগেই সংস্কারহীন ওই সেতু পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় জেলা সেচ ও জলপথ দফতর সেতুটির পাশে একটি নোটিস টাঙিয়ে দিয়ে ঘোষণা করে, ‘বিপজ্জনক সেতু, ভারি যান চলাচল নিষিদ্ধ’। কিন্তু সেতু মেরামত বা পুননির্মাণে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেই এলাকার মানুষের অভিযোগ। ভগবতীপুরের সুশান্ত দে, সুব্রত মণ্ডলরা বলেন, “ওই সেতু ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছি। কখনও পূর্ত সড়ক দফতর বলেছে ওই সেতুর দায়িত্ব সেচ দফতরের। আবার সেচ দফতর জানিয়েছে, রাস্তাটি পূর্ত সড়ক দফতরের। তাই সেতু সংস্কার বা তৈরির দায়িত্ব তাদের নয়। এ ভাবেই দু’বছর কেটে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন কোনও সুরাহা করেনি।” তখন বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীরা নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ওই সেতু কাজ চালানো গোছের মেরামত করে নেন।
বৃহস্পতিবার সকালে উপর দিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস পারাপারের সময় সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দু’পাড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ ওই রাস্তার উপর দিয়েই চলাচল করে রামপুরহাট-রামনগর, বহরমপুর-রামপুরহাট রুটের বিভিন্ন বাস। ওই রাস্তা দিয়েই তারাপীঠে যান বহু পুণ্যার্থী। এমনকী, পাথর খাদান সংলগ্ন এলাকা থেকে রোজদিন শয়ে শয়ে ট্রাকও ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়ত করে। কিন্তু সেতু ভেঙ্গে এখন সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। ভগবতীপুরের জ্যোতির্ময়ী নন্দী, অর্ঘ্য মণ্ডলরা বলে, “সেতু ভেঙে পড়ায় বাস তো চলছেই না, মোটরবাইক কিংবা ভ্যানরিকশাও বন্ধ। এর ফলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে একমাত্র সম্বল সাইকেল। তার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় হাতে নিয়েই বাড়ি থেকে বেরতে হচ্ছে।”
এ দিকে, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান বলছেন, “কেন দু’বছরেও ওই সেতুটির সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হল না, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” এ নিয়ে পূর্ত (সড়ক) দফতরের জেলার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুশোভন গুহ স্পষ্টই বলছেন, “সেচ খালের উপর নির্মিত সেতু নির্মাণের দায়িত্ব সেচ দফতরেরই। আমরা ইতিমধ্যেই ওই দফতরকে সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছি।” অন্য দিকে, সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুজিত কোনার বলেন, “শুধু ওই সেতুটিই নয়, বর্তমান জেলায় ৩২টি সেতু ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। আমরা সেগুলি সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। টাকা বরাদ্দ হলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আপাতত যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জরুরিকালীন ভিত্তিতে অস্থায়ী ভাবে সেতুটির সংস্কারের ব্যাবস্থা করা হবে বলে সুজিতবাবু আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy