Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালেই প্রসূতি, তবু নিখোঁজের ডায়েরি

হাসপাতালের তিনতলায় নবজাত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে শিশু। কিছুটা দূরে একটি ঘরে রয়েছেন সেই শিশুর মা। অথচ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘সৌজন্যে’ সেই মা নিখোঁজ। তাঁর নামে থানায় নিখোঁজের ডায়েরি পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে কৌশল্যা হাঁসদা।—নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে কৌশল্যা হাঁসদা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

হাসপাতালের তিনতলায় নবজাত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে শিশু। কিছুটা দূরে একটি ঘরে রয়েছেন সেই শিশুর মা। অথচ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘সৌজন্যে’ সেই মা নিখোঁজ। তাঁর নামে থানায় নিখোঁজের ডায়েরি পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন অযোধ্যাপাহাড়ের কালহা গ্রামের ওই প্রসূতি কৌশল্যা হাঁসদা। বিভ্রান্ত তাঁর পরিজনেরা। আর এ নিয়েই সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার দিনভর তাঁদের জেরবার হতে হল।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ অক্টোবর সন্তান প্রসবের জন্য পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে কৌশল্যাকে ভর্তি করা হয়। সেই রাতেই কৌশল্যার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তাঁর স্বামী ধনীরাম হাঁসদা জানান, বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ টানতে পারছিল না। তাই শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গেই তিনতলায় নবজাত শিশুর পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনি বলেন, “দুধ পান করাতে না পারার জন্য স্ত্রী ছেলের কাছে যেতে পারছিল না। নার্সরাই শিশুটিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাবার খাওয়াচ্ছিল। প্রথম দিকে স্ত্রী দোতলায় প্রসূতি বিভাগে ছিল। পরে তাকে তিনতলার একটি ঘরে (মাদার হাউস) পাঠানো হয়।” গোলমালের সূত্রপাত এরপরে।

সোমবার কৌশল্যার দাদা ডমন বাস্কে হাসপাতালের নবজাত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পান, তাঁর ভাগ্নের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তাঁর বোনকে ওয়ার্ডে না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এই ক’দিন সব সময় হাসপাতালে থাকতে পারিনি। কিন্তু বোন তো ওয়ার্ডেই ছিল। তা হলে ও নিখোঁজ বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন ডায়েরি করল?” তিনি জানান, হাসপাতালের কিছু কর্মীর কথায় তাঁরা দু’দিন ধরে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তাঁর দাবি, “কর্মীরা জানান, বোন যেহেতু নিখোঁজ তাই বাচ্চা সুস্থ হলেও সহজে তাকে মায়ের কাছে দেওয়া যাবে না। হাসপাতালের কেউ কেউ আবার জানান, বোনকে নতুন করে ভর্তি হতে হবে। তারপরেই বাচ্চা দেওয়া যাবে। কী ভাবে যা বোনও ও ভাগ্নেকে নিয়ে বাড়ি ফিরব তা ভেবে পাচ্ছি না।” এ নিয়ে মঙ্গলবারও তাঁরা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেন। কিন্তু নানা মুনির নানা মত শুনে তাঁদের কার্যত দিশেহারা অবস্থা। কৌশল্যাদেবী মঙ্গলবার বলেন, “এই হাসপাতালে আমার ছেলে রয়েছে। আমি হাসপাতাল ছেড়ে কোথাও যাইনি। মিথ্যা আমাদের হয়রান করা হচ্ছে।”

খবর পেয়ে সোমবার রাতেই জেলা চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চাইল্ড লাইনের কর্মী অশোক মাহাতো বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন কৌশল্যা নিখোঁজ বলে পুলিশের কাছে নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়েছে। তাঁকে বাচ্চা নিতে হলে নতুন করে ভর্তি হতে হবে। অথচ আমি হাসপাতালের মধ্যেই তিনতলায় ওই প্রসূতিকে দেখে এসেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলেই ওই মহিলাকে নিখোঁজ বলে দেখানো হয়েছে।” তিনি জানান, নিয়মের জটিলতা না বাড়িয়ে ওই শিশু সুস্থ হলেই দ্রুত তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি বলেছেন।

মাদার হাউসে কৌশল্যার সঙ্গে অন্য যে প্রসূতিরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবলা মাঝি, পূর্ণিমা পরামাণিক বলেন, “আমরা যে দিন থেকে ভর্তি রয়েছি, কৌশল্যাকে সে দিন থেকে এই বিভাগেই দেখছি।” হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন এ দিন বলেন, “ঘটনাটি এ দিনই আমার নজরে এসেছে। হয়তো যখন খোঁজ নেওয়া হয়েছিল, তখন ওই মহিলা ওয়ার্ডে ছিলেন না। তবে শিশু সুস্থ হলেই তাকে মায়ের কোলে দেওয়া হবে। কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE