Advertisement
০৫ মে ২০২৪
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুরুলিয়া পুলিশের

চাকরি পাক জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা

ফুটবল, স্বাস্থ্য শিবিরের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় জনসংযোগের চেষ্টা নতুন নয়। এ বার সেই পথেই যুবক-যুবতীদের চাকরির জন্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

পাশে আছি। বার্তা পুলিশের। — নিজস্ব চিত্র

পাশে আছি। বার্তা পুলিশের। — নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

ফুটবল, স্বাস্থ্য শিবিরের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় জনসংযোগের চেষ্টা নতুন নয়। এ বার সেই পথেই যুবক-যুবতীদের চাকরির জন্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

রবিবার বলরামপুরের ভজনাশ্রম বিদ্যালয়ে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন, চাহিদা আমরা বুঝি। যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে চাকরির ক্ষেত্রে ওঁরাও কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা রাখে। ওদের স্বপ্নকে উসকে দিতেই এমন উদ্যোগ।’’

আপাতত ঠিক হয়েছে, বলরামপুরের ভজনাশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তাহে তিন দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শনিবার দুপুরের পরে, রবিবার দশটার পর থেকে আর একটা দিন এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। বলরামপুর, লাগোয়া বাঘমুণ্ডি ও আড়শা এলাকার যুবক-যুবতীদের নিয়েই এই কেন্দ্র চলবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ১২০ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘এমন অনেক পরীক্ষা রয়েছে যার বিজ্ঞপ্তি কখন বের হয়, তা অনেকেই জানতে পারেন না। এই কেন্দ্র থেকে সেই সমস্ত তথ্যও জানা যাবে।’’ স্থানীয় একটি গ্রন্থাগারের সঙ্গেও কথা বলেছেন পুলিশ কর্তারা। সেখান থেকে মিলবে প্রয়োজনীয় বইপত্র।

এলাকার যাঁরা বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি করছেন বা শিক্ষকতা করছেন বা যাঁরা এ ধরনের পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তাঁরাই প্রশিক্ষণ দেবেন। বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুদীপ মাহাতো স্বয়ং পুলিশ সুপারকে পড়ানোর ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে সম্মতিও দিয়েছেন রূপেশ কুমার।

এমন প্রশিক্ষণ শিবিরের খবরে উল্লসিত এলাকার পড়ুয়ারা। রবিবার সাতসকালেই অযোধ্যা পাহাড়তলির লুকুইচাটানির গ্রাম থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে বলরামপুরে হাজির হয়েছিলেন উপেন। অন্য দিনের তুলনায় ভোরে উঠে চাষের কাজ করে উরমা পর্যন্ত সাইকেলে এসে সেখান থেকে বাস ধরে বলরামপুরে পৌঁছেছেন ঘাটবেড়ার ইন্দ্রজিৎ সোরেনের মতো তরুণেরা। কাঁটাডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বলরামপুর কলেজে পড়ছেন উপেন। ইতিমধ্যেই স্নাতক হয়েছেন ইন্দ্রজিত। এঁরা সকলেই প্রশিক্ষণ শিবিরে সুযোগ পেয়েছেন। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া পড়ুয়াদের প্রায় সকলেই দিনমজুর পরিবারের।

চাকরির স্বপ্ন কে না দেখে— আর তা যদি সরকারি চাকরি হয়, তবে তো কথাই নেই। অযোধ্যা পাহাড়তলির লুকুইচাটানি বা ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকার বান্দুডির যুবকের স্বপ্নের সঙ্গে এ বিষয়ে পার্থক্য নেই কোনও শহর বা শহরতলির যুবকের। কিন্তু, চাই বললেই তো আর হল না! — জরুরি হল প্রশিক্ষণ। সেখানেই পিছিয়ে রয়েছেন জঙ্গলমহলের ছাত্র-যুবরা। মাও-পর্বের পরে এখন স্বস্তি ফিরেছে জঙ্গলমহলে। পুরোদমে চলছে স্কুল-কলেজ। এমন আবহে উসকে গিয়েছে সুপ্ত স্বপ্নও।

এই আবহে এমন প্রশিক্ষণ জরুরি ছিল বলে মনে করছেন সকলেই। কেননা, এই এলাকার ছেলেমেয়েদের চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে আসানসোল, দুর্গাপুর কিংবা বাঁকুড়ায় যাবার সামর্থ্য নেই। ঠিক সেই সময়ে জেলা পুলিশের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে পড়ুয়া বা তাঁদের অভিভাবকেরা। কেমন?

বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন বাইরের অনেকেই বলরামপুর সম্পর্কে ভাবতেন, এখানকার ছেলেমেয়েরা শুধু অস্ত্র ধরে। ওই সময় অনেকের কাছে বিকল্প পথ ছিল না। শিক্ষার পরিবেশ ছিল না। ক্রমশ পরিবেশ পাল্টেছে। এখনই তো স্বপ্ন দেখার সময়।’’ সুদীপবাবু এমন কর্মসূচির জন্য পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সাধুবাদ জানিয়েছেন বলরামপুরের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারাণি টুডুও। সভাধিপতির কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে এমন সুযোগ ছিল না। তেমনটা হলে এলাকার আরও উন্নতি অবধারিত ছিল।’’

পুলিশের তরফে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব আসার পরে দ্রুত তা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলরামপুরের বিডিও পৌষালি চক্রবর্তী। ডিএসপি (সদর) কল্যাণ সিংহরায় জানিয়েছেন, চাকরির পরীক্ষার বিশেষ রীতি সম্পর্কে ওই প্রশিক্ষণে পাঠ দেওয়া হবে। আর পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা সফল হলেই উদ্যোগ সার্থক হবে।’’ আশার কথা, এমন প্রশিক্ষণ শিবির জেলার অন্য ব্লকেও শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ পুলিশ সুপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE