Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নেট-নিগ্রহে কী করছে সাইবার থানা, প্রশ্ন সব মহলেই

এমন অভিযোগ মোটেই নতুন নয়। এর আগেও অনেকেই এই ধরনের হুমকি বা হেনস্থার শিকার হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ দায়ের করা বা মামলা রুজু হওয়ার পরে আদৌ সুরাহা হয় কি?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৮
Share: Save:

কোনও বিষয় হলেই হল। যেমন-তেমন বিষয় একটা পেয়ে গেলেই ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া যেন কার্যত উন্মুক্ত ‘রণক্ষেত্র’! অনেক ক্ষেত্রেই সেই যুদ্ধে যুক্তি, তর্ক, শালীনতার বালাই থাকে না। নির্বিচারে গালিগালাজ, হুমকি চলতেই থাকে। বিপক্ষে মহিলা থাকলে তো কথাই নেই। বাদ যায় না ধর্ষণ কিংবা অ্যাসিড ছোড়ার হুমকিও! সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলমালের পরেও এমন প্রবণতাই সামনে এসেছে। এই নিয়েলালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন নেট-নিগ্রহের শিকার হওয়া এক ছাত্রী।

এমন অভিযোগ মোটেই নতুন নয়। এর আগেও অনেকেই এই ধরনের হুমকি বা হেনস্থার শিকার হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ দায়ের করা বা মামলা রুজু হওয়ার পরে আদৌ সুরাহা হয় কি? বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে, নেট-দুনিয়ায় মহিলাদের ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের হুমকি, নিগ্রহের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি কর্নাটকের মহিলা কমিশন জানিয়েছে, সেখানে জমা পড়া ৬০ শতাংশ অভিযোগই নেট-দুনিয়ায় নিগ্রহ সংক্রান্ত। দৃষ্টান্ত আছে বঙ্গেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় টালিগঞ্জের এক অভিনেত্রীর উপরে নিয়মিত কুরুচিকর আক্রমণ চলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মিম’ তৈরিতেও বারবার মহিলাদের অবমাননার ঘটনা ঘটেছে।

রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সব ক্ষেত্রে মামলা রুজু করে তদন্ত হয় এবং প্রয়োজনে গ্রেফতার করে চার্জশিটও দেওয়া হয়। বেশ কিছু মামলার বিচারও চলছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যে মামলার অগ্রগতি তেমন হয় না, তা-ও মেনে নিয়েছে পুলিশের একাধিক সূত্র। পুলিশি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়ো প্রোফাইল খুলে এই ধরনের অপরাধ করা হয়। তাই ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস এবং অন্যান্য তথ্য বার করে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে হয়। তাতেও প্রাথমিক ভাবে তদন্তে কিছুটা সময় লাগে।

রাজ্য সরকারের সাইবার সংক্রান্ত মামলার বিশেষ আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই বিচার মিলছে। এক মহিলা বিচারক নিজেই সাইবার হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় দোষীর জেল ও জরিমানা হয়েছে। বিধাননগরের এক তরুণীর মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে।’’ তবে বিভাসবাবু জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে তদন্তে জটিলতার সৃষ্টি হয়, পড়তে হয় পরিকাঠামোগত অভাবের মুখে। সে-ক্ষেত্রে বিচারে দেরি হয়। ‘‘ইদানীং ফেসবুকের মতো সংস্থাগুলি থেকে তথ্য মিলছে। তার ফলে তদন্তে সুবিধাও হচ্ছে,’’ বলেন বিভাসবাবু।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সহযোগিতা মেলে না। তাতেও তদন্ত ব্যাহত হয়। ‘‘অনেক সময় অভিযোগকারিণী হয়তো বাইরে পড়তে বা চাকরি করতে চলে যান। অনেকে বারবার আদালতে যেতেও অস্বস্তি বোধ করেন। এই ধরনের সহযোগিতা না-করার মানেই সংশ্লিষ্ট তরুণীর দোষ রয়েছে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই,’’ বলেন সাইবার মামলার এক তদন্তকারী অফিসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Harassment Cyber Crime Branch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE