Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Dattapukur Blast

পুলিশ থেকে সংবাদমাধ্যম, সজাগ সব পক্ষ, বাজির গুদাম ভর্তি ‘প্রমাণ’ লোপাটে মরিয়া দাদারা

খুনের পরে যে ভাবে অতি সন্তর্পণে মৃতদেহ গায়েব করা হয়, জমিয়ে রাখা বাজি ও বাজির মশলাও সেই কায়দায় সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই কাজে স্থানীয় যুবকদের মোটা টাকার টোপও দিচ্ছেন দাদারা।

An image of the fire crackers in the pond

পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বস্তা ভর্তি বাজি। মঙ্গলবার, মোচপোলে। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৩৪
Share: Save:

বাজি, তুমি কার? দত্তপুকুরের মোচপোল ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে বাজির বস্তা ভাসতে দেখে এটাই এখন বড় প্রশ্ন পুলিশের কাছে। পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে সেখানকার বাজি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এখন এলাকাছাড়া। কিন্তু নিজেরা গা-ঢাকা দিলেই তো হবে না। মজুত করে রাখা লক্ষ লক্ষ টাকার বাজি, বাজির মশলা ও অতিদাহ্য রাসায়নিকও সরিয়ে ফেলা দরকার। সেই সরানোর কাজ করতে গেলে ঝুঁকি প্রবল। কারণ, পুলিশ থেকে সংবাদমাধ্যম, সব পক্ষই এখন সেখানে অত্যন্ত সজাগ। তাই খুনের পরে যে ভাবে অতি সন্তর্পণে মৃতদেহ গায়েব করা হয়, জমিয়ে রাখা বাজি ও বাজির মশলাও এখন সেই কায়দায় সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আর এই কাজ করে দিলে মিলবে মোটা টাকা, স্থানীয় যুবকদের ফোন করে এমনই প্রস্তাব দিচ্ছেন দাদারা।

ওই এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই ২২০০ কেজি বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। আরও বাজির খোঁজ চলছে। সেই সঙ্গেই পুলিশ খতিয়ে দেখছে, ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না। সূত্রের খবর, এলাকার বাজি ব্যবসায়ীদের এখন আশঙ্কা, বিস্ফোরণের দায় তাঁদের ঘাড়েও চলে আসবে না তো? সেই কারণেই ‘প্রমাণ’ লোপাটে এখন প্রবল সক্রিয় তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে মোচপোল ও বেরুনানপুকুরিয়ার মতো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বেআইনি বাজির সাম্রাজ্য। এলাকার ছোট-বড় দাদারাও ধীরে ধীরে হাত পাকিয়েছিলেন এই ব্যবসায়। কেউ প্রত্যক্ষ ভাবে বাজি সরবরাহে যুক্ত হয়েছিলেন। কেউ আবার রাসায়নিক-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতেন। কেউ আবার শুধু গুদাম ভাড়া দিয়েই মোটা টাকা আয় করতেন দাদাদের থেকে। গোটা এলাকা জুড়ে তৈরি হওয়া এমন অজস্র গুদাম ভাড়া নিয়ে সেখানে মজুত করা হয়েছিল বাজি, বাজির মশলা ও রাসায়নিক। স্থানীয় এক যুবক বললেন, ‘‘ঘটনার পরেই অধিকাংশ বাজির কারবারি পালিয়ে গিয়েছেন গোপন ডেরায়। কিন্তু বাজি ও বাজির কাঁচামাল, সব এখানেই রয়ে গিয়েছে। পুলিশ সে সবের সন্ধান পেলে বিস্ফোরণে নাম জড়িয়ে যেতে পারে, এই ভেবেই সেই দাদারা এখন প্রমাণ লোপাটে মরিয়া।’’

বিস্ফোরণের এক দিন পরেই এক দাদার ফোন পেয়েছিলেন স্থানীয় এক যুবক। ফোনে ওই দাদা গুদামের নাম উল্লেখ করে ‘মালের বস্তা’ সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন। এমনকি, প্রয়োজনে গুদাম থেকে বার করে সেই সব বস্তা পুকুরের জলে ফেলা হলেও আপত্তি নেই তাঁর। লোকসান হয় হোক, আপাতত জেলযাত্রা এড়াতে চান সেই দাদা। ওই যুবকের কথায়, ‘‘যে করে হোক, পুলিশের নজর এড়িয়ে কাজটা করে দিতে পারলে বস্তা-প্রতি তিন হাজার টাকা করে দেবে বলেছিল। কিন্তু আমি ভয়ে রাজি হইনি।’’ একই বক্তব্য বেরুনানপুকুরিয়ার বাসিন্দা আর এক যুবকের। তাঁর কথায়, ‘‘যে দাদারা এত দিন আমাদের ফোনও ধরতেন না, তাঁরাই এখন ফোন করে বার বার অনুরোধ করছেন। মাল বাইরে বার করে দিতে পারলে নাকি যা চাইব, তা-ই দিতে রাজি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেউ কি আর রাজি হয়!’’

যদিও মঙ্গলবার মোচপোল এলাকার একাধিক পুকুরে বাজি-ভর্তি বস্তা ভাসতে দেখা গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় মিলেছে বারুদের বস্তা পড়ে থাকার ছবিও। এলাকাবাসীর বক্তব্য, অন্তরালে বসেই আপাতত আইনরক্ষকদের সঙ্গে প্রমাণ লোপাটের ‘চোর-পুলিশ খেলা’য় মেতেছেন দাদারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE