E-Paper

হেড স্যরের হাতে ঘণ্টা, দরজা খুলছেন প্রধান শিক্ষিকা

বৃহস্পতিবারের রায়ের পরে বহু স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বীরভূমের নলহাটি হাই স্কুল ফর গার্লসে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা থাকলেন না রায়ের পরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪০

— প্রতীকী চিত্র।

এক নির্দেশে চাকরিহারা অন্তত ২৬ হাজার। এক লপ্তে এত শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় দিকে দিকে সমস্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার কোথাও স্কুলে ঝাঁট দিলেন শিক্ষক, কোথাও ঘণ্টা বাজালেন। পাশাপাশি, উচ্চ মাধ্যমিকে একাধিক বিষয় কী ভাবে পড়ানো হবে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশে প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

চাকরিহারা কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এ দিন স্কুলে যাননি বলে সূত্রের দাবি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, ‘‘১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলে যাচ্ছেন না, এমন তথ্য নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কী করণীয়, কী নয়— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। মানবিক বার্তা দিয়েছেন চাকরিহারাদের। ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আবেদন করছি, মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রাখুন।’’

তবে বৃহস্পতিবারের রায়ের পরে বহু স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বীরভূমের নলহাটি হাই স্কুল ফর গার্লসে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা থাকলেন না রায়ের পরে। আলিপুরদুয়ারের হ্যামিল্টনগঞ্জ হাইস্কুলের যে ছ’জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিন জন পড়াতেন রসায়ন, অঙ্ক এবং জীববিজ্ঞান। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের দাবি, ‘ডেটা সায়েন্স’, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সহ উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৪টি এমন বিষয় রয়েছে, যেগুলি মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয় না। সে সব পড়ানোয় প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরিহারা। ফলে, সে সব বিষয় পড়ানোয় সমস্যা হতে পারে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তার দাবি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি বাতিলকে কেন্দ্র করে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ দেরি হবে না। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে খাতা দেখা নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। যাঁরা খাতা দেখছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।’’

সংসদ সূত্রের খবর, রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যত প্রধান পরীক্ষক রয়েছেন, তাঁদের অধীনে ২০-২৫ জন পরীক্ষক থাকেন। চাকরি বাতিল হয়েছে জেনে এক জন প্রধান পরীক্ষকের কাছে সাত-আট জন পরীক্ষক খাতা ফেরত দিয়েছেন, এমন হয়েছে। তবে সংসদ সভাপতির দাবি, ‘‘প্রধান পরীক্ষকের কাছে এক বা দুজন চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকা খাতা ফেরত দিয়েছেন।’’

বীরভূমের ইলামবাজারের সাহাপুর হাই স্কুলে দুই শিক্ষাকর্মীরই চাকরি বাতিল হওয়ায় শুক্রবার স্কুলের তালা খোলা থেকে শুরু করে ক্লাসের পরীক্ষা শেষে ঘণ্টা দেওয়া, স্কুল শেষে ক্লাসরুম বন্ধ করা—সবই করতে হয়েছে প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন আহমেদকে। একই ভাবে রায়গঞ্জের উদয়পুর গার্লস হাই স্কুলে দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরি যাওয়ায়, এ দিন প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা সরকার স্কুলের দরজা খুলেছেন।

হুগলির বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস হাই স্কুলের (হিন্দি মাধ্যম) ৪১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ১৫ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। শুক্রবার তাঁরা স্কুলে আসেননি। বাকিদের মধ্যে চার জন ‘ছুটি’ নেওয়ায় আসেননি। পরিস্থিতি সামলাতে পরীক্ষায় ‘গার্ড’ দেন প্রধান শিক্ষক বিশাল তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে কত দিন চালাতে পারব, জানি না!’’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর ঘাটতি পূরণে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী ভাবে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের কথা ভাবছেন। আবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী নিভাননী উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির বিভাগগুলিকে একত্র করা হয়েছে। যাতে নবম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষকেরা বাড়তি ক্লাস নিতে পারেন।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে হাজিনগর আদর্শ হিন্দি বিদ্যালয়ের ৪৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি গিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার পড়ুয়ার একাংশ এ দিন স্কুলে গিয়ে দাবি করেছে, অবিলম্বে পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। উল্টো ছবি মুর্শিদাবাদের সুতির বহুতালি হাই স্কুল, পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কুরুম্বা হাই স্কুলে। সুতির স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিআইসি) জিয়াউল হক, আউশগ্রামের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবদাস সিংহ— দু’জনেই চাকরিহারা। দু’জনেই বলেছেন, ‘‘স্কুলে পরীক্ষা চলছে। এই অবস্থায় স্কুলের দায়িত্ব ছেড়ে কী করে যাই?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Recruitment Case School Teachers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy