E-Paper

জিটি রোডের ‘মরণ ফাঁদ’ সারানোর দায় কার, উঠছে প্রশ্ন

হাওড়া শহরের জিটি রোডের মতো ‘লাইফলাইন’-এর বিভিন্ন জায়গায় খোয়া বেরিয়ে যে গর্ত তৈরি হয়েছে, তা সারানোর দায় কার?

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫০
বিপজ্জনক: খানাখন্দে ভরা জি টি রোড। বালির নিমতলা এলাকায়।

বিপজ্জনক: খানাখন্দে ভরা জি টি রোড। বালির নিমতলা এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ পথে ছড়িয়ে রয়েছে মৃত্যুফাঁদ। তাতে যানবাহনের চাকা পড়ে পিছলে গেলেই বিপত্তি। গুরুতর জখম বা মৃত্যু, যা কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু হাওড়া শহরের জিটি রোডের মতো ‘লাইফলাইন’-এর বিভিন্ন জায়গায় খোয়া বেরিয়ে যে গর্ত তৈরি হয়েছে, তা সারানোর দায় কার?

প্রশাসনের কোনও সদুত্তর নেই। স্থানীয়দের কটাক্ষ, ‘‘যত ক্ষণ না বড়সড় দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি ঘটছে, তত ক্ষণ গর্ত বোজানো হয় না।’’ অভিযোগ, পিচ উঠে খোয়া বেরিয়ে ‘মরণফাঁদ’ তৈরি হলেও তা মেরামতি নিয়ে বিভিন্ন দফতরের দায় ঠেলাঠেলি চলে। ফলে, বেহাল রাস্তায় ছোট-মাঝারি দুর্ঘটনা কার্যত রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় স্তরে গর্ত বোজানোকে বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের কাজ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

যেমন, বুধবার রাতে বালির নিমতলা এলাকায় জিটি রোডের একটি বড় গর্ত ও ছড়িয়ে থাকা খোয়ায় পড়ে একটি বাইকের চাকা পিছলে যায়। তাতে নিমতলার দিক থেকে
বালি বাজারের দিকে যাওয়া বাইকটি ছিটকে গিয়ে বেশ খানিকটা দূরে জিটি রোডের মাঝামাঝি পড়ে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘উল্টো দিক থেকে সেই সময়ে কোনও লরি বা গাড়ি চলে এলে বড় বিপদ ঘটত। ওই বাইকের পিছনে থাকা গাড়িটিও ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।’’ এই ঘটনায় হাতে-পায়ে চোট পান চালক। জানা যাচ্ছে, ওই রাস্তা খুঁড়ে রেখেছিল কেএমডিএ। ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারাই ইট ও রাবিশ এনে জিটি রোডের ওই গর্ত বুজিয়ে দেন। যদিও ওই গর্ত তারাই আপাতত মেরামত করেছে বলে এ দিন জেলা প্রশাসনে দাবি করেছে কেএমডিএ। আর স্থানীয়দের দাবি, এ দিন সকাল থেকে কোনও কাজ করা হয়নি। হাওড়ার মহকুমাশাসক তথা বালি পুরসভার প্রশাসক অমৃতা বর্মণ রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যখন যেমন বেহাল রাস্তা নজরে আসে, পুরসভা ঠিক করে দেয়। তবে শুধু পুরসভা নয়। জিটি রোডে বিভিন্ন সংস্থার কাজ চলে। তাদেরও জানানো হয়।’’

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বালির দেওয়ানগাজিতে জিটি রোডের একটি কাটা অংশে সিমেন্ট মিক্সিং ট্রাকের চাকা পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ট্রাকটি ডান দিকে ঘুরে উল্টো দিক থেকে আসা ট্যাক্সিতে ধাক্কা মারে। সেটিকে নিয়ে রাস্তার পাশের একটি বাড়ি ভেঙে ঢুকে যায় ওই ট্রাক। সেই ঘটনায় ট্যাক্সির চালক ও যাত্রীর দেহ বার করতে গ্যাস কাটার দিয়ে ট্যাক্সি কাটতে হয়। জিটি রোডের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। তাই ওই ঘটনার পরে জিটি রোডের বিভিন্ন বেহাল অংশ মেরামত করে পূর্ত দফতর। তা হলে আবার বালি নিমতলা এলাকায় ওই গর্ত তৈরি হল কী ভাবে?

স্থানীয়দের দাবি, দিন তিন-চার ধরে ওই গর্তটি জলে ভরে ছিল। জানা যাচ্ছে, কেএমডিএ ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রকল্পে কাজের জন্য রাস্তাটি খুঁড়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত রাস্তায় ওই গর্ত থেকে গেলেও স্থানীয় পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত
আধিকারিকদের কি তা চোখে পড়েনি? আর যদি নজরে এসে থাকে, তা হলে সংস্কার হয়নি কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, কর্মীদের একাংশের সদিচ্ছা ও সমন্বয়ের অভাবে গর্ত থাকলেও তা মেরামতির জন্য কেএমডিএ-কে তাগাদা দেননি কেউই।

পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, জিটি রোড ব্যস্ততম রাস্তা। সংস্কার শুরু হয়েছে। বালিতেও কাজ হবে। তবে বহু ক্ষেত্রেই আবার পূর্ত বা কেএমডিএ-কে বার বার জানানোর পরে কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে পুরসভার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

GT Road accidents

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy