Advertisement
E-Paper

তড়িঘড়ি ফল প্রকাশ, ধেয়ে আসছে প্রশ্নও

মামলার রায় বেরোতে না বেরোতে তড়িঘড়ি ফল প্রকাশ। ‘জট’ ছাড়ানোর জন্য আদালতকে মুখ্যমন্ত্রীর সাধুবাদ, এবং প্রচুর চাকরির দরজা খোলায় সন্তোষ প্রকাশ। পাশাপাশি ‘সমালোচক’দের উদ্দেশে কটাক্ষ বর্ষণ। ‘টেট’ নিয়ে বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরকারি তরফে এত কিছুর পরেও প্রশ্ন কিন্তু রয়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫

মামলার রায় বেরোতে না বেরোতে তড়িঘড়ি ফল প্রকাশ। ‘জট’ ছাড়ানোর জন্য আদালতকে মুখ্যমন্ত্রীর সাধুবাদ, এবং প্রচুর চাকরির দরজা খোলায় সন্তোষ প্রকাশ। পাশাপাশি ‘সমালোচক’দের উদ্দেশে কটাক্ষ বর্ষণ। ‘টেট’ নিয়ে বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরকারি তরফে এত কিছুর পরেও প্রশ্ন কিন্তু রয়ে গেল।

গেল, কারণ প্রাথমিকের টেটে ঠিক কত জন পাশ করেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এ দিন সে তথ্য দিতে পারেনি। এমনকী উত্তীর্ণদের মধ্যে কত জন প্রশিক্ষিত (ডিএলএড), তা-ও জানানো হয়নি। এ হেন ‘গোপনীয়তা’ দেখে বিরোধীর ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। এই ‘ঢাকঢাক-গুড়গুড়ের’ মধ্যেই অস্বচ্ছতার বীজ লুকিয়ে রয়েছে বলে তাদের আশঙ্কা।

এ দিন বেলা বারোটা নাগাদ হাইকোর্ট জানায়, চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে টেট-পাশ প্রশিক্ষিতদের আগে সুযোগ দিতে হবে। আধ ঘণ্টার মধ্যে, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল বার করে দেয় সরকার। ঘণ্টা চারেকের ব্যবধানে সিঙ্গুরেও পৌঁছে যায় টেটের রেশ। কী রকম?

মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে টেটের ফল প্রকাশ করে দিয়েছি। এ বার অনেকে চাকরি পাবেন।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তিনি জানতে চান, ‘‘কত জনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট হচ্ছে?’’ কিছুটা দূর থেকে পার্থবাবু মাইকে জবাব দেন, ‘‘দু’টো (প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক) মিলিয়ে প্রায় ষাট হাজার।’’ শুনে মমতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘ষাট হাজার ফল বেরিয়ে গিয়েছে! তা হলে বুঝতে পারছেন, এই ছেলে-মেয়েগুলো চাকরি পাবে।’’

এবং এ প্রসঙ্গেই ‘নিন্দুক’দের এক হাত নিয়েছেন মমতা। ‘‘যাঁরা বলেন চাকরি নেই-চাকরি নেই, তাঁরা দেখুন, এ বার কত জন চাকরি পাবে!’’— মন্তব্য তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কোর্টে গিয়ে কুটুস করে একটা কেস ঠুকে দিয়ে বসে থাকে। তাদের বলি। আমরা রেডি হয়ে থাকি। আমরা রেডি করেই রাখি রে।....অ্যাকশন ইজ লাউডার দ্যান ওয়ার্ড। .... কাজ করো, কাজ করো। কাজ করে কথা বলো।’’

পর্ষদের খবর: গত বছর প্রথমে ঠিক হয়েছিল, প্রাথমিকের টেট হবে সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি। সেই মতো দিন স্থির হলেও পরীক্ষাকেন্দ্রে চালানের পথে কিছু প্রশ্নপত্র উধাও হয়ে যায়। সিআইডি-তদন্তেও হদিস মেলেনি। আরও এক বার পিছিয়ে শেষমেশ ১১ অক্টোবর পরীক্ষা হয়। কিন্তু মামলা থাকায় এত দিন ফল প্রকাশ করা যায়নি। এ দিন কোর্টের রায়ে সব বাধা কাটতেই মোট ২০ লক্ষ ১ হাজার ৩০১ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত বিবরণ দেওয়া হবে। www.wbresults.nic.in ওয়েবসাইটে রোল নম্বর দিলে ফল জানা যাবে। জেনারেল ক্যাটেগরির প্রার্থীরা ৬০% ও সংরক্ষিতেরা ৫৫% পেলেই উত্তীর্ণ হবেন।

কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশে রাখঢাক কেন? পর্ষদ সূত্রের ব্যাখ্যা: এর আগের উত্তীর্ণ-তালিকায় ১৮ হাজার পরীক্ষার্থীর নাম রাখা হয়েছিল। পরে নজরে আসে, এদের প্রায় তিন হাজারের উচ্চ মাধ্যমিকে নূন্যতম যোগ্যতা নেই! পর্ষদ ফের সেই ভুল করতে চায় না। তাই উত্তীর্ণদের সমস্ত যোগ্যতা-শংসাপত্র যাচাই না-করে পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা করা হবে না।

জমা পড়ার সময়েই আবেদনপত্র কেন পরীক্ষা করা হয় না?

পর্ষদ-সূত্রের দাবি: সেটা বিস্তর সময়সাপেক্ষ। ‘‘বিশ লাখ ছেলে-মেয়ের সার্টিফিকেট ভেরিফাই করে পরীক্ষা নিতে হলে তো এক বছর লেগে যাবে!’’— বলছেন এক পর্ষদ-কর্তা। বিরোধীদের একাংশ যদিও যুক্তিটি মানতে নারাজ। তাঁদের পর্যবেক্ষণ: কোর্ট শুধু বলেছে তাড়াতাড়ি রেজাল্ট বার করতে। বুধবারই বার করতে হবে, এমনটা বলেনি। ‘‘তা হলে সমস্ত তথ্য নিয়েই কেন ফল প্রকাশ করা হল না?’’— প্রশ্ন ওঁদের। যা শুনে পর্ষদ-কর্তাটির জবাব, ‘‘আমরা পরীক্ষার্থীদের স্বার্থেই ফল প্রকাশ করেছি। উত্তীর্ণদের পরিসংখ্যান নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মাথা ব্যথা নেই।’’

ঠিক এই কারণেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এখানেই পরিষ্কার, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’’ ওঁদের বক্তব্য: রায় মেনে দ্রুত নিয়োগ শুরু হোক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মেধা-তালিকার বদলে টাকার খেলা যেন না চলে।

এ দিন উচ্চ প্রাথমিক স্তরের টেট-ফলও বেরিয়েছে। পরীক্ষাটি হয়েছিল ২০১৫-র অগস্টে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাড়ে বারোটায় দফতরের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়ে গিয়েছে।’’ এ দিন সন্ধে পর্যন্ত অবশ্য সাইটটি খোলা যায়নি!

TET
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy