১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ। প্রয়াণ হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কবি চেয়েছিলেন, তাঁর শ্রাদ্ধ হবে শান্তিনিকেতনে ছাতিমগাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায়। কথা রেখেছিল শান্তিনিকেতন। কবির মৃত্যুকে শোকসভা করে নয়, বরং নতুন প্রাণের আবাহনের মধ্য দিয়েই তাঁকে চির অমর করে রেখেছে।
১৩৪৯ বঙ্গাব্দ থেকেই বাইশে শ্রাবণ দিনটি বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে শান্তিনিকেতন। নিজের জীবনকালেই কবি বহুবার পালন করেছেন বৃক্ষরোপণ উৎসব। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ উত্তরায়ণে নিজের হাতে পঞ্চবটী (বট, অশ্বত্থ, অশোক, বেল, আমলকি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই বৃক্ষরোপণের দিনটিই স্থির হয়ে গেল বাইশে শ্রাবণ তারিখে।
বৈদিক আদর্শ এবং শান্তিনিকেতনের নিজস্ব চরিত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই উৎসবে। প্রতীকী আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৃক্ষচারা রোপিত হয় আশ্রম চত্বরে। বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের দিন ভোরবেলায় কলাভবনের পড়ুয়ারা আশ্রম চত্বর ঘুরে জোগাড় করে নিয়ে আসেন টাটকা রঙিন ফুল। ফুল ও পাতা সরবরাহ করা হয় বিশ্বভারতীর উদ্যান বিভাগের তরফ থেকেও। সেই ফুল দিয়েই তৈরি করা হয় পঞ্চকন্যার বাহারি অলংকার। পঞ্চকন্যার সাজে সজ্জিত করা হয় কলাভবনেরই পাঁচ ছাত্রীকে। এই পঞ্চকন্যা বৃক্ষরোপণে পঞ্চভূতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। অন্য দিকে, পঞ্চভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম-এর সজ্জায় উপস্থিত থাকে পাঠভবন বা শিক্ষাসত্রের খুদে পড়ুয়ারা। আর তুলনামূলক বড়রা তাদের হয়ে পাঠ করে ‘বনবাণী’ কাব্যগ্রন্থের অংশবিশেষ।