Advertisement
E-Paper

লাইনে ফাটল, ট্রেন থামালেন মাধবরা

কুয়াশার ভিতর থেকে হঠাৎ দৌড়ে এলেন এক যুবক। হাঁফাচ্ছেন। মাথাভাঙা রোডের উপরে নিজের ছোট হোটেলে বসে অবাক মাধব দাস। দোকানে আরও তিন চার জন দাঁড়িয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৫
সারানো হচ্ছে লাইনের ফাটল।

সারানো হচ্ছে লাইনের ফাটল।

কুয়াশার ভিতর থেকে হঠাৎ দৌড়ে এলেন এক যুবক। হাঁফাচ্ছেন। মাথাভাঙা রোডের উপরে নিজের ছোট হোটেলে বসে অবাক মাধব দাস। দোকানে আরও তিন চার জন দাঁড়িয়ে। ওই যুবক বাপ্পা রাজভর তাঁদের বলেন, রেললাইনে ফাটল। যা শুনে প্রথম কয়েক মুহূর্ত মাধববাবুরা বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন। আর ঠিক তখনই একটা ট্রেনের বাঁশি কানে আসে।

আর কাউকে কিছু বলতে হয়নি। সবাই ছোটেন রেললাইনের দিকে। গায়ের লাল জামা খুলে নাড়তে থাকেন মাধববাবু। কিন্তু ট্রেন থামেনি। ঘন কুয়াশার জাল কেটে এসে তাঁদের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় বামনহাট-আলিপুরদুয়ার প্যাসেঞ্জার। আর একটু গেলেই ওই ফাটল। লাইনের ধারে চিৎকার করতে শুরু করেন তাঁরা। হাত তুলে লাল জামা নাড়তে নাড়তে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে ছুটছিলেন মাধববাবু। ফাটলের উপরে ইঞ্জিন উঠে গিয়েছে দেখে চোখ বুজে ফেলেন। সামনে দিয়ে পরপর দু’টো কামরাও চলে যায়। তবে তারপরেই শুনতে পান, ব্রেক কষে ট্রেন থেমে যাওয়ার শব্দ। মাধববাবু বলেন, ‘‘মনে হল ঘাড় থেকে মস্ত বোঝা নেমে গেল।’’

মাধব দাস।

ট্রেনটির কিছু হয়নি। কুয়াশার জন্য খুব আস্তে যাচ্ছিল বলেই, ফাটলে উঠে পড়েও লাইনচ্যুত হয়নি। রেল সূত্র জানাচ্ছে, ফাটলটা খুব বড়ও নয়। উত্তর-পূর্ব রেলের আলিপুরদুয়ার শাখার ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর জানিয়েছেন, শীতে এই সময় লাইনে এমন ফাটল দেখা দেয়। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের নজরদারি রয়েছে। তবে যে গ্রামবাসী ঠিক সময় ছুটে এসে ট্রেন দাঁড় করিয়েছেন তাঁকে অভিনন্দন জানাই।” পাশাপাশি তিনি গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই লাইনের নির্দিষ্ট জায়গায় এখন ট্রেন ধীরে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সকালেই ওই লাইনের কাছে চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ট্রেনটি।’’ ট্রেনটিতে সকালবেলা বেশ ভিড়ও হয়। কোচবিহার স্টেশন থেকে অনেকে উঠেছিলেন এ দিনও। পরের স্টেশন ছিল দেওয়ানহাট।

ঘুঘুমারির বাসিন্দা বাপ্পা জানান, লাইনের পাশ দিয়েই সকালে বাজার করতে যাচ্ছিলেন। তখনই নজরে পড়ে ফাটলটা। মাধববাবুর বক্তব্য, বাপ্পার কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরে তাঁদের দ্বিধা ছিল। রেলের বিষয়ে জড়িয়ে পড়তে চাননি। কিন্তু তার পরেই মনে পড়ে যায় অন্ধ্রপ্রদেশের রেল দুর্ঘটনার কথা। আটচল্লিশ ঘণ্টাও পেরোয়নি সেই দুর্ঘটনা। তাই আবার রেলের বাঁশি শুনে তাঁরা ছুটতে শুরু করেন লাইনের দিকে।

চালক জানিয়েছেন, কুয়াশায় তিনি প্রথমে কাউকে দেখতে পাননি। তবে চিৎকার কানে এসেছিল। তার পরে খেয়াল করেন লাইনের ধারে একজন লাল জামা দেখাচ্ছিলেন। ট্রেন থামিয়ে দেন। নীচে নেমে সব শুনে ফোন করেন নিউ কোচবিহার স্টেশনে। রেলের কর্মীরা আধ ঘন্টার মধ্যে হাজির হয়ে লাইনের কাজ শুরু করেন। অনেক যাত্রী নীচে নেমে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “আপনি আমাদের বাঁচিয়েছেন।”

ট্রেন চলে গিয়েছে ঘণ্টাখানেক পরেই। ঘুঘুমারি কিন্তু তাকে ভুলতে পারবে না অনেক দিন।

ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

Madhab Das Rail Line Cracked Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy