Advertisement
E-Paper

স্তব্ধ কেন শাহবাগ? গর্জে ওঠ, পাশে আছি

ঝর্নারানি সিমুই রাঁধছিলেন। ইদের দিন। গোটা বাংলা খোশমেজাজে। কিশোরগঞ্জের ভৌমিক বাড়িতেও উৎসব কড়া নেড়েছিল। তাই উৎসবের রসনার সুবাসে ম ম গোটা বাড়ি। হিন্দু পরিবার তো কী হয়েছে? উৎসবের আবার হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান হয় নাকি?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৪:০১

ঝর্নারানি সিমুই রাঁধছিলেন। ইদের দিন। গোটা বাংলা খোশমেজাজে। কিশোরগঞ্জের ভৌমিক বাড়িতেও উৎসব কড়া নেড়েছিল। তাই উৎসবের রসনার সুবাসে ম ম গোটা বাড়ি।

হিন্দু পরিবার তো কী হয়েছে? উৎসবের আবার হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান হয় নাকি? বাংলার শারদোৎসবে মুসলমান-খ্রিস্টান সামিল হয় না? নাকি বড়দিনে হিন্দু-মুসলমান কেক খায় না? উৎসবে মাততে বাংলা ধর্মের ভেদ করে না।

কিশোরগঞ্জেও কিন্তু ছবিটা সে রকমই ছিল। প্রতিবেশী মুসলমান পরিবারগুলোর আঙিনায় যে দিনটা খুশি বয়ে আনল, ভৌমিক বাড়ির দরজায় পৌঁছে সে দিনটা প্রত্যাখ্যাত হবে, তেমনটা কখনোই হয়তো ভাবত না ঝর্নারানি ভৌমিকের পরিবার।

কথাটা এখানেই শেষ হয়ে গেলে ভাল হত। শুনতে ভাল লাগত। ছবিটা বেশ সুন্দর দেখাত। কিন্তু কথাটা শেষ হয়নি এখনও। এর পর বিস্ফোরণ বাকি ছিল, চাপাতির কোপ বাকি ছিল, গুলির লড়াই বাকি ছিল, রক্তপাত বাকি ছিল, প্রাণনাশ বাকি ছিল। সে সব কিছুই একে একে হল। ফলে ছবিটা আর সুন্দর রইল না। মর্মান্তিক হয়ে উঠল। রান্নাঘর থেকে ঘরে ঢুকলেন ঝর্নরানি ভৌমিক। বাইরে তখন গুলির লড়াই। একটা গুলি ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ল। উৎসবের রান্না আর শেষ হল না।

গল্পটা কিন্তু শুধু ঝর্নারানিকে নিয়েও নয়। গল্পটা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে। উৎসবের দিনেও রক্তপাতে বিরাম নেই। মুক্তমনা আর নাস্তিকদের খুন দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার পর দেখলাম পুরোহিত, সেবাইত আর সংখ্যালঘু হত্যা। এ বার শুরু হয়েছে নির্বিচার গণহত্যা। প্রথমে ঢাকা। তার পর কিশোরগঞ্জ। এর পর আরও কোথায় কোথায় দেখতে হবে জানা নেই।

এই বাংলাদেশ আমার চেনা নয়। ভাষার প্রতি প্রাণঢালা আবেগ যে বাংলাদেশের, আমি তাকে চিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত যে বাংলাদেশ, আমি তাকে চিনি। সুজলা-শ্যামলা বুকে অসীম ভালবাসা যে বাংলাদেশের, আমি তাকে চিনি। একুশের বাংলাকে চিনি, ইলিশের বাংলাকে চিনি, রমনার বটমূলে যে বাংলাকে দেখেছি, তাকে চিনি। এই নৃশংস, বর্বর, হিংস্র বাংলাকে আমি চিনি না। আমার মতো আরও অনেকেই চেনেন না।

বাঙালি হৃদয়ে পীড়া হচ্ছে আজ। এই বাংলাদেশের দিকে তাকাতে পারছি না। এ হিংসার প্রতিরোধ জরুরি। শাহবাগ কোথায় গেলে? এই তো সে দিন গর্জে উঠলে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে। আজ স্তব্ধ কেন? গর্জে ওঠ ফের। বজ্রের মতো আঘাত হানো। পাশে থাকবে সব বাঙালি। পাশে থাকবে এই বাংলা, এই ভারত।

Shahbag Bangladesh terror attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy