আচমকাই চোখে দেখতে সমস্যা। চক্ষু চিকিৎসক চশমা দিলেও সমস্যা কমেনি ২৮ বছরের রেশমা খাতুনের। বরং ক্রমশ শরীরের ভারসাম্য হারাচ্ছিলেন। শেষে দেখা গেল, তাঁর মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার।
কিন্তু জীবনটা সেখানেই থেমে যায়নি মহেশতলার ওই তরুণীর। বরং শহরে এসে চিকিৎসক দেখিয়ে, প্রায় ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পরে আজ তিনি স্বাভাবিক জীবনে। রবিবার বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবসে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেই যুদ্ধ-জয়ের গল্প শোনালেন রেশমা। একই রকম ভাবে সুস্থতার গল্প শোনালেন পেশায় শিক্ষক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, ‘‘শুনতে হয়েছিল, অস্ত্রোপচার হলে পক্ষাঘাতের আশঙ্কা মারাত্মক। কিন্তু সেই ধারণা যে ঠিক নয়, তা নিজেদের দিয়ে বুঝেছি।’’ ওই দুই রোগীর অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক তথা হাসপাতালের স্নায়ু-শল্য বিভাগের অধিকর্তা অমিতাভ চন্দের কথায়, ‘‘ব্রেন টিউমার মানেই জীবন শেষ, এই ধারণার পরিবর্তন করতে সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র পথ।’’
অমিতাভ জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য আতঙ্ক নয়, ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। মস্তিষ্কের টিউমারের বড় উপসর্গ মাথার যন্ত্রণা। কিন্তু ৩০ শতাংশ রোগীর সেই উপসর্গ থাকে না। তিনি আরও জানান, তিরিশোর্ধ্ব কারও আচমকা খিঁচুনি হলে তার কারণ হতে পারে মস্তিকের টিউমার। পাশাপাশি, চোখের সমস্যা, হাত-পায়ে জোর কমে যাওয়া, ভারসাম্যের সমস্যা, ঘাড়-মাথা-পিঠে ব্যথার মতো উপসর্গ দীর্ঘ দিন ধরে থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
মস্তিষ্কের টিউমার মানেই দীর্ঘ সময়ের অস্ত্রোপচারে রোগীকে অজ্ঞান করে রাখা নয় বলেও জানাচ্ছেন অমিতাভ। বরং রোগীকে জাগিয়ে রেখে অস্ত্রোপচারের সাফল্যের হার খুব ভাল। কারণ, অনেক সময় মস্তিষ্কের এমন জায়গায় টিউমার থাকে যা হয়তো কথা বলা, হাঁটাচলাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে ক্ষেত্রে জাগিয়ে রেখে অস্ত্রোপচার করলে কোনও সমস্যা লক্ষ করা গেলে তৎক্ষণাৎ তা ঠিক করা সম্ভব। কিন্তু এই চিকিৎসার খরচ কি সকলের পক্ষে করা সম্ভব? সিএমআরআই হাসপাতালের ইউনিট-হেড সোমব্রত রায় বলেন, ‘‘আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির এমন সমস্যায় যাতে চিকিৎসায় অসুবিধা না হয়, সে জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প রয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)