Advertisement
E-Paper

নীরবতা ভেঙে সিবিআইকে তথ্য দিলেন রজত

বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কিছুই বলবেন না সিবিআই-কে। সেই ভোল বদলাতে লাগলো মোটে ৪৮ ঘণ্টা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন ডিজি তথা তৃণমূলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার জানিয়েছেন, সারদায় তাঁর দায়দায়িত্ব ও কাজের ধরন কী ছিল। মুখ যে তিনি খুলবেন, তার ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে ঢোকার সময় বলে গেলেন, “সময় এলেই বলব।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৩

বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কিছুই বলবেন না সিবিআই-কে। সেই ভোল বদলাতে লাগলো মোটে ৪৮ ঘণ্টা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন ডিজি তথা তৃণমূলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার জানিয়েছেন, সারদায় তাঁর দায়দায়িত্ব ও কাজের ধরন কী ছিল। মুখ যে তিনি খুলবেন, তার ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে ঢোকার সময় বলে গেলেন, “সময় এলেই বলব।”

দু’দিন আগে যখন মুখে কুলুপ আঁটার কথা বলেছিলেন রজত, তখন কিন্তু তাঁর পরিচিত মহলের, বিশেষ করে তৃণমূলেরই কেউ কেউ বলেছিলেন, এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। রজত যে অচিরেই মুখ খুলবেন, তারই ইঙ্গিত দিতে তিনি আগে ভাগে গান গেয়ে রাখলেন মুখে কুলুপের। সে জল্পনা সত্যি করেই এ দিন সিবিআই-এর কাছে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।

সিবিআই সূত্রের খবর, জেরায় রজতবাবু জানিয়েছেন, সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে গোড়ার দিকে তিনি ছিলেন নিরাপত্তাজনিত পরামর্শদাতা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে সারদা গোষ্ঠী বিভিন্ন আমানত প্রকল্পের যে টাকা তুলত, সেই টাকা জমা হতো নির্দিষ্ট একটি জায়গায়। আর সেখান থেকে ওই টাকা যেত সল্টলেকে সারদা-র দু’টি অফিসে। ওই দুই জায়গায় কী ভাবে কার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হবে, টাকা পাঠানোর সময় নিরাপত্তা কী ভাবে দেওয়া হবে এ সব দেখাশোনা করতেন রজতবাবু। দিনের পর দিন লক্ষ লক্ষ নগদ টাকা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যে ভাবে পাঠানো হত, তাতে প্রশাসনের কোনও অংশকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। রজতবাবু সেই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারেন বলে সিবিআইয়ের অনুমান।

সিবিআই জানায়, রজতবাবু সারদা গোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতেন এক বছর ধরে। তার পরের দু’বছর সারদা গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। রজতবাবুর সম্পর্কে কুণাল ঘোষ, আসিফ খান, সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে সিবিআই জেনেছে, ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার প্রশ্নে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন ওই প্রাক্তন পুলিশ অফিসার।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে কোথাও রজতবাবু সম্পর্কে কোনও অভিযোগ ছিল না। অথচ, জেরায় সুদীপ্ত সেন রজতবাবু সম্পর্কে কিছু অভিযোগ জানান। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, সুদীপ্ত সেন আগে ওই অভিযোগ করেননি কেন? তাঁদের অনুমান, সুদীপ্ত সেন সিবিআইকে যে চিঠি লিখেছিলেন সেই চিঠির ব্যাপারে আরও অনেক তথ্য জানেন রজতবাবু। ওই চিঠি লেখা কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, সেটা জানার জন্যও রজতবাবুকে আরও জেরা করতে চান সিবিআই কর্তারা। এ দিন তাঁকে সাড়ে ১০ ঘণ্টা জেরা করা হয়। তদন্তকারীরা জানান, শনিবার রজতবাবু কয়েকটি বিষয়ে মুখ খুলেছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে রজতবাবু অবশ্য তেমন কিছু কথা বলেননি।

রজত যে দিন মুখ খুললেন, সে দিনও বিবৃতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ এ দিন জানিয়েছেন, সিবিআই দফতরের সামনে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের মধ্যে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী ওই পুরসভার চলচ্চিত্রোৎসবের নৈশভোজের আয়োজন করেন ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি পাঁচতারা হোটেলে। সেই ভোজসভার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সুদীপ্ত সেন। এই ব্যাপারে গোটা শহরে যে সব হোর্ডিং দেওয়া হয়েছিল, তার অনেকটারই খরচ বহন করেছিল সারদা। কৃষ্ণাদেবীর স্বামী সমীর চক্রবর্তী ওরফে বুয়াকে কিছু বিষয়ে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আর এ সব ঠেকাতেই কৃষ্ণাদেবী বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কুণাল।

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য রাত পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করলেও কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে ফোনে ধরা যায়নি। তিনি এসএমএসেরও জবাব দেননি। তবে সারদার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্ত এ দিন জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ি পৌঁছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ওই নৈশভোজ সারদার টাকাতেই হয়।

সারদা রিয়েলটির মামলায় এ দিন সোমনাথবাবুর সঙ্গে জামিন পেয়েছেন কুণাল, সুদীপ্ত, দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও। কিন্তু অন্যান্য মামলায় জামিন না মেলায় হেফাজতেই রয়েছেন তাঁরা। ধৃতদের আইনজীবীরা এ দিন আদালতে জানান, গ্রেফতারের পর থেকে এ দিন পর্যন্ত ৯০ দিন পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হয়নি। বিচারক প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকার জামিনে মুক্তি দেন।

একই মামলায় অবশ্য অসমের গায়ক সদানন্দ গগৈকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সদানন্দকে শুক্রবার সিবিআই গ্রেফতার করে। এ দিন সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, সারদা গোষ্ঠীর টাকা অসমে কী ভাবে, কাদের কাছে সরানো হয়েছে, সেটা জানতে অভিযুক্ত সদানন্দ গগৈ-কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে।

সারদা নিয়ে শাসক দলের প্রতি বিরোধীদের আক্রমণ কিন্তু অব্যাহত। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় শহিদ মিনার ময়দানে এই নিয়ে প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন জানান, “ওই সভায় থাকবেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা সি পি জোশীও।” তাঁর অভিযোগ, “জামাতের হাত শক্ত করতেই মমতা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা চুক্তি হতে দেননি!”

shardha scam rajat majumder cbi information
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy