E-Paper

আদর্শ আচরণবিধি উঠে গিয়েছে, তবু কেন পুরনো পদে ফিরছেন না? চর্চা রাজীব কুমারকে ঘিরে

প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, লোকসভা ভোট মেটার পরে ৫ জুন আদর্শ আচরণবিধি উঠে যেতেই রাজীবকে পুরনো পদে বহাল করতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখনও তা হয়নি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ০৮:১১
Rajeev Kumar

রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।

ভোট মিটলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অপসারিত অফিসারদের স্বপদে ফিরিয়ে আনাই ছিল এতদিনের দস্তুর। তা মেনে রাজ্য পুলিশের ডিজি পদে এতদিনে ফেরার কথা ছিল রাজীব কুমারের। কিন্তু, এখনও তিনি ফেরেননি। মুখ্যমন্ত্রী রাজীবকে রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি করলেও, লোকসভা ভোটের সময় তাঁকে অপসারণ করেছিল নির্বাচন কমিশন।

প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, লোকসভা ভোট মেটার পরে ৫ জুন আদর্শ আচরণবিধি উঠে যেতেই রাজীবকে পুরনো পদে বহাল করতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, তা হয়নি। এর মধ্যে কলকাতার মানিকতলা-সহ চারটি বিধানসভায় উপনির্বাচন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ১০ জুলাই সেই ভোট হবে। তাই ১০ জুন থেকে ফের আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে। রাজ্য বা কলকাতা পুলিশের শীর্ষপদে (ডিজি এবং কমিশনার) তাই রদবদল এখনই সম্ভব নয়। ফলে, এই ভোট না মেটা পর্যন্ত রাজীবকে ডিজি পদে ফেরানো যাবে না। অথচ ৬ থেকে ৯ জুনের মধ্যে বদলির অন্যান্য প্রক্রিয়া হয়েছে।

অফিসারদের স্বপদে ফেরানোর দস্তুর মেনেই সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বড় রদবদলের প্রস্তাব করে নোটশিটে সই করেছিলেন দিন চারেক আগেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই হওয়ার আগেই তা কী ভাবে ‘ফাঁস’ হল, তা নিয়ে আলোড়ন পড়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। ফলে জল্পনা তৈরি হয়েছে, এই কারণেই কি সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা এখনও প্রকাশ পেল না! বদলি করা হল না সংশ্লিষ্ট অফিসারদের?

ঘটনাচক্রে, যে দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি ওই নোটশিটে সই করেন, সে দিনই প্রশাসনিক মূল্যায়ন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল পুলিশ প্রশাসন। তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। সূত্রের দাবি, ঘটনাচক্রে ওই মূল্যায়ন বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের কাজকর্ম নিয়েও (রাজীব এখন ওই দফতরের প্রধান সচিব পদে রয়েছেন) প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, সন্দেশখালিতে ভুয়ো ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার সময়ে রাজীবই ছিলেন ডিজি। সেই ঘটনাতেও মমতা উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।

গত ১১ জুন ১১ জন আইপিএস অফিসারের বদলি প্রস্তাব করে সরকারি নোটশিট প্রস্তুত করেছিলেন ডিজি। প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেই নোটশিট পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে তাঁর সইয়ের জন্য। কিন্তু তার আগে সেই দিনই নোটশিটটি বাইরে প্রকাশ হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই সরকারি নথি বাইরে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। সতর্ক করেছিলেন প্রশাসনিক কর্তাদের। নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের ধারণা, আগেভাগে গোটা নোটশিটটি বাইরে চলে যাওয়ার কারণেই সম্ভবত তা নির্দেশিকায় প্রতিফলিত হচ্ছে না এখনও। প্রসঙ্গত, সুন্দরবন পুলিশ জেলা, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার পদে বদলি প্রস্তাব করা হয়েছিল। তার সঙ্গে ছিল আরও কয়েকটি পদে রদবদল। সূত্রের দাবি, কী ভাবে ওই নোটশিটটি বাইরে বেরোল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজ শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

প্রসঙ্গত, প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ভোটপর্ব সাঙ্গ হওয়ার পরে গত মঙ্গলবার গোটা রাজ্য প্রশাসনকে বৈঠকে ডেকেছিলেন মমতা। সেখানে অন্যান্য বিষয় ছাড়াও দীর্ঘ আলোচনা ছিল পুলিশ প্রশাসনকে কেন্দ্র করে। ট্রাকের ওভারলোডিং সমস্যা, টাকা তোলা থেকে তার বণ্টন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই আচরণ যে তিনি মেনে নেবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন সে দিনই। একই সঙ্গে, সরকারি নথি বাইরে কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে খবর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rajeev Kumar West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy