দার্জিলিঙে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পিছনে চিনের ভূমিকা নিয়ে গোয়েন্দা সূত্রে নানা তথ্য আসছে দিল্লির কাছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নিজেই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিমল গুরুঙ্গকে মুখোমুখি বসাতে তৎপর। রাজনাথ নিজের মন্ত্রকের মাধ্যমে ‘ট্র্যাক টু’ গড়ে গুরুঙ্গকে আলোচনায় বসতে অনুরোধ জানান। আর মমতাকে অনুরোধ করেন, দমননীতি নেওয়ার পাশাপাশি আলোচনায় বসার কথা বলে সদর্থক বার্তা দিন।
মমতা গত সপ্তাহেই জানিয়েছিলেন, হিংসা থামলে আলোচনায় বসতে আপত্তি নেই তাঁর। গুরুঙ্গ আবার আলোচনায় বসার জন্য রাজনাথের কাছে তিনটি শর্ত রেখেছেন। প্রথমত, সমস্ত পুরনো মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা দ্রুত চালু করতে হবে। সর্বোপরি, বৈঠক দিল্লিতে করতে হবে। প্রথম এবং তৃতীয় শর্ত মমতা মানবেন কি না, তা নিয়ে কেন্দ্রেরই সংশয় রয়েছে। তাই কলকাতায় যাতে বৈঠকটি হয়, সে জন্য গুরুঙ্গের সঙ্গে কথা বলছেন রাজনাথ। অন্য দিকে, আজ রাজনাথের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা। সাধারণভাবে একে সৌজন্যমূলক বলা হলেও দিল্লির অনেকেই এর সঙ্গে পাহাড় সমস্যার যোগসূত্রও দেখতে পাচ্ছেন।
এমনই আবহে এ দিন দার্জিলিঙে আধাসেনা পাঠানো নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসেন কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধিরা। গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, আধাসেনা দেওয়া নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মধ্যমে মেটাক দিল্লি ও কলকাতা। সেই সূত্রেই আজ স্বরাষ্ট্রকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছিল রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার। সেখানে অনুজ জানান, রাজ্যে থাকা তিন কোম্পানি সশস্ত্র সীমা বল এবং এক কোম্পানি মহিলা আধাসেনার পরিবর্তে সমসংখ্যক সিআরপিএফ দিক কেন্দ্র। এক স্বরাষ্ট্রকর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের অনুরোধ রাখতে গেলে হয় উত্তপ্ত কাশ্মীর বা মাওবাদী প্রভাবিত ছত্তীসগঢ় থেকে সিআরপিএফ সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পাঠাতে হয়।’’
এটা যে সম্ভব নয়, তা জানিয়ে কেন্দ্র পাল্টা বলে: অপেক্ষাকৃত শান্ত জঙ্গলমহল থেকে সিআরপিএফ পাহাড়ে পাঠিয়ে দিক রাজ্য। রাজ্যের হাতে যে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল (ইএফআর) রয়েছে, সেই বাহিনীকেও দার্জিলিঙে পাঠানো যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, অনুজ শর্মা তাদের জানান, জঙ্গলমহল থেকে সিআরপিএফ সরালে ফের সেখানে মাওবাদী সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে। ইএফআর পাঠানো নিয়েও কিছু সমস্যা রয়েছে।
তখন দিল্লির প্রস্তাব, তা হলে জঙ্গলমহল থেকে সিআরপিএফকে পাহাড়ে পাঠিয়ে সেখানে ইএফআর মোতায়েন করা হোক। অনুজ শর্মার জবাব, তিনি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই প্রস্তাব জানাবেন। এ বিষয়ে নবান্ন কর্তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, কী ভাবে জাতীয় সড়ক অবরোধমুক্ত করে সিকিমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানো যায়, তা নিয়েও এ দিন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে সেনা কনভয়ে বা কপ্টারের চাপিয়ে সিকিমে মালপত্র পাঠানোর যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবছে দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy