জাতীয় নিরাপত্তা এবং সীমান্তের পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নবান্নে আসছেন সে বৈঠকের জন্য। আর সেই কর্মসূচিকে ঘিরেই আরও এক বার মমতা-রাজনাথ একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
পূর্বাঞ্চলের সব ক’টি রাজ্যকে নিয়ে ১ অক্টোবর অর্থাৎ আগামী সোমবার নবান্নে বৈঠকে বসছেন রাজনাথ সিংহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওডিশা সরকারের প্রতিনিধিরা। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার প্রতিনিধি হিসেবে কারা আসছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু বাংলার তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বৈঠকে যোগ দেবেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরও তাঁরই হাতে। রাজনাথের সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বেশ ভাল। তাই সোমবারের বৈঠকে মমতার নিজের গরহাজিরার কোনও কারণও নেই।
জল্পনা অবশ্য সেই বৈঠক নিয়ে নয়। জল্পনা সবচেয়ে বেশি রাজনাথ-মমতার একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েই। নবান্ন সভাঘরে সোমবার চার রাজ্যের সঙ্গে রাজনাথ সিংহের বৈঠক ঠিকই। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আলাদা করে কথা হয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক শিবির। শুধু রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির নয়, জাতীয় রাজনীতির অনেক রথী-মহারথীরও নবান্নে সোমবার রাজনাথ সিংহের কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে থাকবেন।
আরও পড়ুন: যুব মোর্চা সভাপতির উপরে রাতভর নির্যাতন ইসলামপুরে? রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের
এর আগে নবান্নে এ রকমই একটি বৈঠক হয়েছিল গত ৭ ডিসেম্বর। সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে রাজনাথ সিংহকে সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপরের তলায় চলে গিয়েছিলেন। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মিনিট পনেরো একান্ত বৈঠক হয়। যে রোহিঙ্গারা এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই বাংলায় প্রবেশ করেছেন, তাঁদের আর পুশব্যাক করা যাবে না— এমন একটি স্মারকলিপিও তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দিয়েছিলেন রাজনাথের হাতে। নবান্ন সূত্রেই তেমনটা জানা গিয়েছিল। এ বারও যদি মমতা-রাজনাথ আলাদা করে মুখোমুখি হন, তা হলে কথা হতে পারে অনেক বিষয় নিয়েই।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক বর্তমানে ঠিক কতটা ‘মধুর’, তা কারও অজানা নয়। এক দিকে মমতা, অন্য দিকে মোদী-অমিত শাহ— পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে বাড়াতে দু’পক্ষই প্রায় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছে গিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত। ফলে নানা বিষয়ে জটিলতা বেড়েছে, সমন্বয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং বাংলার মন্ত্রিসভার মধ্যে সেতু হওয়ার মতো অবস্থানে রয়েছেন একমাত্র রাজনাথই। প্রথমত, মোদী মন্ত্রিসভায় রাজনাথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা সিনিয়র সদস্য। ফলে তাঁর মাধ্যমে কোনও বার্তা নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছলে, তার ওজন অনেক বেশি হয়। দ্বিতীয়ত, রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল হওয়ায়, এমন অনেক বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা মমতা-রাজনাথে হওয়া সম্ভব, যা অন্যদের সঙ্গে হওয়া সম্ভব নয়। সে কথা মাথায় রেখেই সোমবার নির্ধারিত বৈঠকের বাইরেও রাজনাথের সঙ্গে মমতা আলাদা করে কথা বলার চেষ্টা করবেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ধারণা।
আরও পড়ুন: স্কুল পরিদর্শনে শিক্ষাসচিবকেও নামাচ্ছেন পার্থ
যদি সত্যিই সোমবার আলাদা বৈঠকে বসেন মমতা-রাজনাথ, তা হলে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে?
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কথা হতে পারে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ে। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা মোদী সরকারের সঙ্গে মমতা সরকারের সঙ্ঘাত এই মুহূর্তে যে পর্যায়ে, তাতে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক স্তরে নানা সমস্যার আবহ রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। খোলামেলা আলোচনা ছাড়া সেই সব জটিলতা কাটানো কঠিন বলেই তাঁদের মত। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজনাথ সিংহের মতো হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বিজেপির আর কারও সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সে রকম খোলামেলা আলোচনা হওয়া সম্ভব নয় বলেই রাজনৈতিক শিবিরের বিশ্বাস। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই সেতুটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারাতে চাইবেন না। তাই সোমবার নির্ধারিত বৈঠকের বাইরে রাজনাথের সঙ্গে মমতার আলাদা কথা হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছেই।