Advertisement
E-Paper

সাবালকের মিছিলে অস্ত্র নাবালকও, নিন্দায় বিশিষ্টরা

রামনবমীর শোভাযাত্রায় শেষ পর্যন্ত ফের বিতর্ক উস্কে ফিরে এল অস্ত্রই। পুরুলিয়া, বর্ধমান, হাওড়া বা হুগলি— নানা জেলার বিভিন্ন জায়গায় খোলা তলোয়ার, দা, কাটারি বা ত্রিশূল হাতে মিছিল করলেন রামভক্তেরা। এবং গত বারের মতো এ বারও শিশু বা নাবালকদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে হাঁটানো হল মিছিলে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ২৩:০৪
অস্ত্রধারী: পুরুলিয়া শহরে বজরং দলের রামনবমীর মিছিলে নাবালকদের হাতে তলোয়ার। যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

অস্ত্রধারী: পুরুলিয়া শহরে বজরং দলের রামনবমীর মিছিলে নাবালকদের হাতে তলোয়ার। যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, চলবে না।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, চলবেই!

রামনবমীর শোভাযাত্রায় শেষ পর্যন্ত ফের বিতর্ক উস্কে ফিরে এল অস্ত্রই। পুরুলিয়া, বর্ধমান, হাওড়া বা হুগলি— নানা জেলার বিভিন্ন জায়গায় খোলা তলোয়ার, দা, কাটারি বা ত্রিশূল হাতে মিছিল করলেন রামভক্তেরা। এবং গত বারের মতো এ বারও শিশু বা নাবালকদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে হাঁটানো হল মিছিলে!

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, পরম্পরাগত ভাবে যে কয়েকটি জায়গায় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মিছিল করার রীতি আছে, সেখানে চলতে পারে। কিন্তু অন্য কোথাও অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না। রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও গত বারের অভিজ্ঞতার নিরিখে জেলাশাসকদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, মিছিলে নজর রেখে প্রশাসনকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। এত পূর্বপ্রস্তুতি সত্ত্বেও পুরুলিয়ায় বজরং দলের মিছিলে নাবালকের হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে হুগলি বা বর্ধমানেও।

যে ছবি দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট জন এবং মনস্তত্ত্ববিদদের অনেকে। শঙ্খ ঘোষ যেমন বলেছেন, ‘‘এর মধ্যে কোনও ভক্তিত্ব নেই, ধর্মও নেই। আছে শুধু ভ্রষ্ট রাজনীতি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিজেপির এই রাজনীতির ফাঁদে তৃণমূলও পা দিল। বোঝা উচিত ছিল, পাল্টা রামনবমী এর যথাযথ উত্তর নয়।’’ আর অস্ত্র মিছিল প্রসঙ্গে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘নাবালকদের হাতে অস্ত্র দেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। মগের মুলুক চলছে নাকি!’’

সর্বত্র শিশু না থাকলেও অস্ত্র হাতে মিছিল হয়েছে বীরভূমের রামপুরহাট, বর্ধমানের দুর্গাপুর, কাঁকসা, চুঁচুড়ার কাপাসডাঙা, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, চাকুলিয়া, ইসলামপুর, নদিয়ার রানাঘাট-সহ রাজ্যের নানা এলাকায়। খাস কলকাতায় শিয়ালদহ এবং বন্দর এলাকায় অস্ত্র নিয়েই মিছিল হয়েছে। মৌলালির রামলীলা ময়দানে শস্ত্রপুজোর পরে পুলিশ গিয়ে কিছু অস্ত্র আটক করেছে। খড়গপুরে গদা-তলোয়ার নিয়ে বেরিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু, রামপুরহাটে ত্রিশূল হাতে হেঁটেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। চুঁচু়ড়ায় বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে সশস্ত্র মিছিল হয়েছে। অস্ত্র হিসেবে মূলত দেখা গিয়েছে তরোয়াল, ত্রিশূল, নানচাকু, লাঠি, টাঙ্গি এবং কাঠের গদা। বিজেপি নেতাদের দাবি, এগুলির কোনওটাই সেই অর্থে ‘অস্ত্র’ নয়। পরম্পরাগত ভাবে এ সব নিয়ে মিছিল হয়েই থাকে।

আরও পড়ুন: তোমার রাম, আমার রাম, জিগির বাংলায়

বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে যখন নানা জায়গায় অস্ত্র-মিছিল করার অভিযোগ উঠছে, কাঁকিনাড়ায় একই কারণে অভিযুক্ত হয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে বিধায়ক অর্জুন সিংহ! তৃণমূলের মিছিলেও সেখানে দেখা গিয়েছে অস্ত্র। এবং বিজেপি নেতাদের মতোই অর্জুনের দাবি, বেআইনি অস্ত্র নিয়ে কেউ বেরোননি।

কিন্তু কেন হবে অস্ত্র নিয়ে এমন মিছিলের টক্কর? বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর সাফ কথা, ‘‘রামনবমীর এটাই পরম্পরা!’’ এর পরে প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেয়? দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘অভিযোগ যারা করার, করবে!’’

মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো প্রশাসন কি এ বার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে? তৃণমূলের নেতারা বলছেন, প্রশাসনের কাজ প্রশাসন করবে। শাসক দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘যাঁরা এ ভাবে মিছিল করছেন, তাঁরা রামের প্রতি অশ্রদ্ধাই দেখাচ্ছেন। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও তাঁরা রক্ষা করছেন না।’’ বিরোধী বাম নেতারা অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করছেন, রামনবমী নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রেষারেষিতে নেমে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে গুলিয়ে বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করছে তৃণমূলই।

প্রশ্ন হল, মিছিলে অস্ত্র দেখেও সর্বত্র সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না? নদিয়া জেলার পুলিশ সুপার সন্তোষ পাণ্ডে বলেছেন, ‘‘মিছিলে দু’টো অস্ত্র ছিল বলে জানতে পেরেছি। একটা সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিছিল নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’ উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহেরও বক্তব্য, ‘‘অস্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভিডিও রেকর্ডিং খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মিছিলে মিছিলে টক্করের জেরে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত গোলমাল বেধেছে বিজেপি এবং তৃণমূল সমর্থকদের। সন্ধের পর থেকে উত্তেজনার খবর ছড়াতে শুরু করেছে বেশ কিছু জায়গায়। যা কড়া হাতে সামাল দেওয়াই এখন প্রশাসনের পরীক্ষা।

Politics Ram Navami tmc bjp Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy