Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Sabar Tribe

Sabar Tribe: খেড়িয়া শবরদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নারী, শবর-সমাজে বিগ্রহ রমনিতা

কোনও গবেষণাগারে বসে যে সমাজ সংস্কার  সম্ভব নয়, তা-ও জানেন রমনিতা। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে সমাজের বদলের খোঁজে তাঁর একার আন্দোলনও।

রমনিতা শবর

রমনিতা শবর

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২১ ০২:১৯
Share: Save:

নাম, রমনিতা শবর। পুরুলিয়ার খেড়িয়া শবর জনগোষ্ঠীতে তিনিই প্রথম নারী যিনি পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছেন। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রমনিতা। আগামী দিনে গবেষণার কাজও করতে চান। গবেষণার বিষয়ও তিনি ঠিক করে রেখেছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ‘পিছিয়ে পড়া’ জনজাতির তকমা পাওয়া শবররাই এই শবর-কন্যার গবেষণার বিষয়। রমনিতা চান, শিক্ষা শুধু তাঁকে নয় তাঁর সমাজকেও অশিক্ষার অন্ধকার থেকে টেনে তুলুক।

পড়াশোনায় বরাবরই কৃতী ছাত্রী। জেলার শবর কল্যাণ সমিতির তরফে ফেলোশিপও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। রমনিতার ইচ্ছে, অধ্যাপক হবেন। তবে তার আগে নিজের জনজাতির নামের পাশ থেকে ‘পিছিয়ে পড়া’ তকমা মুছে ফেলতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘আমার লড়াই শুধু জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই নয়, আমার লড়াই আমার সমাজের জন্য। আমাদের সমাজের পুরুষদের আপাদমস্তক মাদকাসক্তি আমাকে যন্ত্রণা দেয় । কষ্ট দেয় আমাদের সমাজের মানুষের চরম অভাব। আগামী দিনে গবেষণা করে আমি খুঁজে পেতে চাই এ সবের শিকড় কোথায়? কী ভাবেই বা মিলবে এ সব থেকে মুক্তি?’’ আপাতত সেই সব উত্তর খোঁজার প্রয়াসকে সামনে রেখেই উচ্চতর শিক্ষার পথে এগোচ্ছেন রমনিতা।

কোনও গবেষণাগারে বসে যে সমাজ সংস্কার সম্ভব নয়, তা-ও জানেন এই শবর কন্যা। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে সমাজের বদলের খোঁজে তাঁর একার আন্দোলনও। কখনও সাইকেলে, কখনও পায়ে হেঁটে রমনিতা পৌঁছে যান আশপাশের গ্রামগুলিতে। মুদিডি, তালাডি, পুড়রু, জনড়ার মতো শবর টোলাগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝান শিশুদের স্কুলে পাঠানোর কথা। সমাজের মোড়লদের ডেকে বলেন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা। সময় পেলে শবর শিশুদের নিয়ে গ্রামের রাস্তার ধারে গাছের তলায় মাদুর পেতে পড়াতেও বসে পড়েন।

পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিতের কথায়, ‘‘রমনিতাই এখন গোটা খেড়িয়া শবর জাতির কাছে বৈগ্রহিক।’’ খেড়িয়া শবর এ রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এক প্রাচীন আদিবাসী জনজাতি। গোটা রাজ্যে এঁদের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৯০। জঙ্গলমহলের তিন জেলা মিলিয়ে প্রায় চার হাজার খেড়িয়া শবর পরিবারের বাস। এর মধ্যে শুধু পুরুলিয়াতেই আটটি ব্লকের ১৬৪টি গ্রামে ৩ হাজার ৩৭টি শবর পরিবার বসবাস করে। প্রশান্ত বলছেন, ‘‘রমনিতাকে দেখে এখন বহু শবর পরিবার এগিয়ে আসছে পরিবারের মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে। রমনিতাও গ্রামে ঘুরে ঘুরে শবর ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ওঁকে ফেলোশিপ দিয়েছি। আমরা নিশ্চিত রমনিতার হাত ধরে খেড়িয়া শবর সমাজে যে মেয়েদের শিক্ষার প্রসার হবে। যা খেড়িয়া শবর সমাজকেও মূল স্রোতের কাছে নিয়ে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sidho kanho birsha university Sabar Tribe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE