প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তার নামে অভিযোগ ও জল্পনার অন্ত নেই। বাগদার সেই ‘রঞ্জন’ ওরফে চন্দন মণ্ডলকে এ বার কলকাতা হাই কোর্টে সশরীরে তলব করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ২টোয় চন্দন মণ্ডল ওরফে রঞ্জনকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে হবে।
আদালত সূত্রের খবর, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মামলায় নাম জড়িয়ে যেতেই চন্দন ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন। সিবিআই-ও নাকি তাঁর খোঁজ পায়নি। সেই চন্দনের আইনজীবী এ দিন কোর্টে উপস্থিত হন। উচ্চ আদালতের খবর, রঞ্জনের হাজিরার জন্য তাঁর আইনজীবী কোর্টের কাছে সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আর্জি বাতিল করে দেন বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, বাগদা এত দূরেও নয় যে, হাজির হওয়ার জন্য তিন দিনের বেশি সময় লাগবে।
গত বছর তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিবিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্তা উপেন বিশ্বাস একটি ভিডিয়োয় (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) রঞ্জন নামে এক ব্যক্তির কথা সামনে আনেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে রঞ্জনের ঘনিষ্ঠ যোগের কথা বললেও তাঁর আসল নাম জানাননি তিনি। পরবর্তী কালে কোর্টে জানা যায় যে, রঞ্জনের আসল নাম চন্দন মণ্ডল। পাশাপাশি, আদালত সূত্রের খবর, শুক্রবার উপেনবাবুও কোর্টে হাজির থাকতে পারেন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। একটি মিশনারি শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সদস্য এক সন্ন্যাসিনী ছাড়াও সেই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ছিলেন দেবজ্যোতি ঘোষ এবং পঞ্চানন রায় নামে দুই শিক্ষকও। এ দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, অশীতিপর সন্ন্যাসিনী হলফনামায় তাঁর সমস্ত বক্তব্য জানাবেন। তবে বিশেষজ্ঞ কমিটির বাকি দু’জনকে শুক্রবার কোর্টে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশের বিরোধিতা করে হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে পর্ষদ। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘বেআইনি ভাবে নিযুক্ত’ ২৬৯ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনও ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়েছেন বলে খবর। সেই মামলার শুনানি চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রকম স্থগিতাদেশ না-থাকায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও মামলা শুনেছেন।
মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের ব্যাখ্যা, কোনও স্থগিতাদেশ হয়নি। উপরন্তু দু’টি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও পর্ষদ একটি মামলায় ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়েছে। তাই একক বিচারপতির বেঞ্চে শুনানিতে বাধা নেই। বিচারপতি তালুকদার ও বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানি শেষহয়েছে। কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। একই সঙ্গে লিখিত বক্তব্য জমা দেন বাদী পক্ষের আইনজীবীরাও। এ দিন সওয়ালের জন্য রাজ্যের তরফে আরও সময় চেয়ে আবেদন জানানো হয়। কোর্ট সেই আর্জিখারিজ করে দিয়েছে।
তবে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ হিসাবে জানা গিয়েছে, বাদী কিংবা বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলিদের কোনও বক্তব্য থাকলে আগামী শুক্রবারের মধ্যে তা লিখিত ভাবে জমা দেওয়া যেতে পারে। শুনানি শেষ হওয়ার পরে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ।