Advertisement
E-Paper

কনস্টেবলও জানেন, জানেন না কেন মন্ত্রী

এত দিন তাঁর প্রশ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার নিয়ে। এ বার সাংবাদিকদের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নেতার সুরে সুর মেলাতে দেরি করেননি শাসকদলের একাধিক নেতা-কর্মীও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৮

এত দিন তাঁর প্রশ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার নিয়ে। এ বার সাংবাদিকদের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নেতার সুরে সুর মেলাতে দেরি করেননি শাসকদলের একাধিক নেতা-কর্মীও।

কিন্তু ঘটনা হল, লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত— যে কোনও নির্বাচনের খবর-ছবি সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিক ও চিত্র-সাংবাদিকদের এক্তিয়ার কতখানি, নির্বাচন কমিশনের আইনে তা পরিষ্কার বলা রয়েছে। তারই সূত্রে কমিশন ভোটগ্রহণ ও গণনাকালীন খবর সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সচিত্র পরিচয়পত্র দিয়ে থাকে। সদ্যসমাপ্ত পুরসভার ভোটে তা-ই হয়েছে। কী রকম?

বিধাননগর, আসানসোল ও বালির ১৬টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ ও ভোটগণনার সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমের সাংবাদিক-ফোটোগ্রাফারেরা যাতে অবাধে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের বিশেষ পরিচয়পত্র দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যেরই আইন অনুসারে গঠিত কমিশনের দেওয়া সেই নীল রঙের পরিচয়পত্রে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে— ফর এন্ট্রি, রি-এন্ট্রি ইন পোলিং স্টেশনস/কাউন্টিং সেন্টারস।

অর্থাৎ, ৩ অক্টোবর ভোটের দিন সাংবাদিক, চিত্র-সাংবাদিকদের কর্তব্যের খাতিরে কোনও ভোটকেন্দ্রের ভিতরে যত বার দরকার ঢোকার ছাড়পত্র কমিশনই দিয়েছিল। একই ভাবে ভোট গণনার দিন (পূর্বনির্ধারিত ৭ অক্টোবর) গণনাকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতিও পাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। তবে ভোটকেন্দ্রে যেখানে ভোটযন্ত্র (ইভিএম) রাখা থাকে, চট দিয়ে ঘেরা সেই জায়গায় মিডিয়ার যাওয়া নিষেধ।

গত শনিবার এই পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকেরা বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন। তা সত্ত্বেও বুথের ভিতরে সাংবাদিকদের আনাগোনার ‘এক্তিয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসেছেন পার্থবাবু, যা শুনে পুলিশ-প্রশাসনের বড় অংশ বিস্মিত। রবিবার তৃণমূল ভবনে বসে মহাসচিব বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের কাজ নির্দিষ্ট। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে তাঁদের কী কাজ ছিল, সেটাও তো দেখতে হবে! দেখতে হবে, কী প্ররোচনা ছিল।’’

এটুকু বলেই থেমে থাকেননি তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এক জন সাংবাদিক কী করে পোলিং বুথের ভিতরে যেতে পারে?’’ পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী এ-ও দাবি করেছেন, সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ‘‘সাংবাদিকেরা পোলিং বুথের ভিতরে যেতেই পারেন না।’’— মন্তব্য তাঁর।

শাসকদলের শীর্ষস্তরের নেতা ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এ হেন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অবশ্য প্রশাসন ও পুলিশের বড় অংশ সহমত নয়। এই মহলের বক্তব্য, ভোটগ্রহণ ও গণনার দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে কর্তব্যরত ভোট-কর্মী ও পুলিশকর্মীরাও সাংবাদিকদের ওই পরিচয়পত্রকে মান্য করেন। বস্তুত ভোট-ডিউটিতে যাওয়া পুলিশকে এ ব্যাপারে আগাম অবহিত করে রাখা হয়। বুথের ভিতরে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকেন যে সব সরকারি কর্মী, প্রশিক্ষণের সময়ে তাঁদেরও সাংবাদিকদের এক্তিয়ারের বিষয়টি জানিয়ে রাখা হয়। এমতাবস্থায় পার্থবাবুর কথা শুনে প্রশাসনের শীর্ষ কিছু কর্তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ কনস্টেবল বা সরকারি কর্মীরাও যা জানেন, শিক্ষামন্ত্রী তা জানেন না! অবাক কাণ্ড!’’

শুধু ওঁরা নন। সোমবার দলীয় ধর্নায় তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী কাউন্সিলর বা পূর্ণেন্দু বসুর মতো মন্ত্রী পার্থবাবুর সুরে সুর মেলালেও দলের একাংশ আবার তাঁর মন্তব্যে বিস্মিত। এক নেতার কথায়, ‘‘ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সব সময়েই সাংবাদিকেরা ঢোকেন। মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, পার্থদার মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভোট দিতে গেলেও বুথের ভিতরে ছবি ওঠে। তা হলে তো সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয়!’’ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একাংশ জানাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের জোগাড় করা খবর ও ছবি দেখে অনেক সময় তারাও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

বিরোধীরা কী বলছে?

বিরোধীদের দাবি: এটা তৃণমূল নেতৃত্বের বিড়ম্বনা এড়ানোর চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। কারণ, বিভিন্ন চ্যানেল ও সংবাদপত্র যে ভাবে শাসকদলের ‘ভোট লুঠের’ ছবি-খবর তুলে ধরেছে, তাতে পার্থবাবুর দল যথেষ্ট অস্বস্তিতে। তাই সাংবাদিক পেটানোর জোরালো সমালোচনার বদলে তিনি উল্টে সাংবাদিকদের এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এক বিরোধী নেতার মন্তব্য, ‘‘পুরভোটে সাংবাদিক নিগ্রহ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ পর্যন্ত একটা শব্দও খরচ করেননি। দলের তরফে পার্থবাবু যা-ও বা কিছু বললেন, তার মূল বিষয় হয়ে গেল সাংবাদিকদের এক্তিয়ার!’’

এ প্রসঙ্গে সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেসের একাধিক নেতার অভিযোগ, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসা ইস্তক গণমাধ্যমের অধিকার খর্ব করতে নানা পদক্ষেপ করেছে। নবান্নে সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, যাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ধারা প্রয়োগের হুঁশিয়ারিও মজুত! এ বারও বৈধ পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিকদের এক্তিয়ারকে কাঠগড়ায় তুলে পার্থবাবুরা আসলে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

journalist Partha Chatterjee trinamool congress municipal election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy