Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যপাল ভিন্ন মত

প্রশ্নের মুখে রায়গঞ্জের উপাচার্যের ভূমিকাও

শিক্ষামন্ত্রী বলছেন বিক্ষিপ্ত ঘটনা। রাজ্যপালের বক্তব্য, এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। শনিবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা-গুলি নিয়ে এক দল যুবকের তাণ্ডব প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর শোনা গেল দু’জনের গলায়।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার গিরিশ মঞ্চে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি। রাজ্যপালের ছবি ফাইল চিত্র।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার গিরিশ মঞ্চে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি। রাজ্যপালের ছবি ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২
Share: Save:

শিক্ষামন্ত্রী বলছেন বিক্ষিপ্ত ঘটনা। রাজ্যপালের বক্তব্য, এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। শনিবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা-গুলি নিয়ে এক দল যুবকের তাণ্ডব প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর শোনা গেল দু’জনের গলায়।

বিভিন্ন কলেজে ছাত্র আন্দোলন বা গোলমালের ঘটনায় রাজ্য সরকার কোণঠাসা হচ্ছে কি না বা কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটছে কি না— এই প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবুর এ দিন বলেন, ‘‘এটা ছাত্র আন্দোলন নাকি! বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটছে।’’

এ দিন সন্ধ্যায় ভাষা সাহিত্য পরিষদের একটি অনুষ্ঠানের শেষে রায়গঞ্জের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘গুলি চলার ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে এটা বাঞ্ছনীয় নয়।’’ এই ঘটনা নিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাঁকে রিপোর্ট দেবেন বলেও রাজ্যপাল জানান।

শুক্রবার সরকারি শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসে উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘‘গুলিও চলেনি, বোমাও পড়েনি। সব মিথ্যা প্রচার, ইচ্ছাকৃত ভাবে রটানো হচ্ছে। দূরে কোথাও কোনও ঝামেলা হচ্ছিল, সেখান

থেকে বোমা-গুলির শব্দ এসেছে।’’ এই দাবি করার পর তিনি রাজ্যপালকে ঘটনার কী ধরনের রিপোর্ট দেবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এ দিন মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও অনিলবাবু ধরেননি।

পার্থবাবুর মুখে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ শুনে শিক্ষাজগতের অনেকেই কিন্তু আর বিস্মিত হচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, ২০১২-র জানুয়ারিতে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মার খাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ছোট-ছোট ছেলেরা একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।’’ সাড়ে তিন বছর পরে সেই একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (এখন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়) বোমা–গুলি নিয়ে এক দল যুবকের তাণ্ডবের পরে সেটিকে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’র আখ্যা দিয়ে পার্থবাবু তাঁর দলনেত্রীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন বলেই দাবি করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ। ঘটনাচক্রে, দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্ত শাসকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।

ঘটনার পিছনে রাজনীতি যা-ই থাকুক না কেন, উপাচার্য যে বিষয়টিকে নানা ভাবে লঘু করতে চাইছেন, তা নিয়ে এর মধ্যেই শিক্ষকমহলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, কিছু কি আড়াল করতে চাইছেন অনিলবাবু? চাইলে কেন চাইছেন? বস্তুত, শিক্ষামন্ত্রীও এ দিন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। কলকাতায় শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, ‘‘রায়গঞ্জের উপাচার্য আমাকে বলেছেন, দু’দল বহিরাগতের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। নির্দিষ্ট করে আমাকে কিছু বলেননি। আমি বলেছি, নির্দিষ্ট করে বলুন। শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও নৈরাজ্য বরদাস্ত করা হবে না।’’ তাঁর মতে, ‘‘বামফ্রন্ট যা রেখে গেছে তার থেকে বেরোতে তো কিছুটা সময় লাগবে।’’ এবং সংবাদমাধ্যমকে দুষে তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যে এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে দু’একটি ঘটনার ছবি দেখানো হচ্ছে, তা দুঃখের।’’

রায়গঞ্জে গোলমালের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সব জায়গায় অনলাইন ব্যবস্থা চালু করতে না পারার ঘটনা-ও যে দায়ী, তা মেনে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর মতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল হয় সাধারণত দু’টি সময়ে। এক, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়। দুই, ভর্তির সময় (রায়গঞ্জেও ভর্তির তালিকা নিয়ে গোলমালের জেরেই অশান্তির সূত্রপাত)। কলেজে অনলাইন ভর্তি তাঁদের সরকারই চালু করেছে বলে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, এখনও যে সব জায়গায় অনলাইন-ভর্তি চালু হয়নি, সেখানেও শীঘ্রই ওই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।

এ সবের মধ্যেই রায়গঞ্জের ঘটনার সঙ্গে অনেকে সবং কাণ্ডের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। সবং কলেজের ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় যেমন ওই কলেজের ছাত্র সংসদে ক্ষমতাসীন ছাত্র পরিষদের উপরে দায় চাপানো হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে টিএমসিপি। গত বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল পুলিশ। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি তারা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলির খোল পড়ে থাকার ছবি মিললেও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়নি।

গত ১০ অগস্ট রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র পরিষদ এবং কলেজ দখলে মরিয়া টিএমসিপি-র গোলমালে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। দু’তরফেই নির্দিষ্ট নাম দিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় এখনও কাউকে পাকড়াও করা হয়নি। এই প্রসঙ্গেই রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-সমর্থকদের বাঁচাতে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।’’

পুলিশের বক্তব্য, অস্ত্র আইনে মামলা করতে হলে ওই কার্তুজটি যে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছোড়া হয়েছিল, তা-ও উদ্ধার করতে হয়। সেটি পাওয়া যায়নি বলেই অস্ত্র আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। গুলি-বোমা নিয়ে তাণ্ডবের ঘটনা নিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও জোগাড় করা যায়নি বলে দাবি করেছে তারা। উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। এর বেশি এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE