Advertisement
E-Paper

অভিযুক্তরা দলের কেউ নয়, দাবি শুভেন্দুর

মিছিলে খাপ খোলা পিস্তল নিয়ে দলীয় কর্মীদের সোল্লাস, মুখ পুড়িয়েছিল শাসক দলের। কান্দির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সেই ঘটনার পরে দলীয় নেতারা ঝেড়ে ফেলেছিলেন অভিযুক্তদের।

শুভাশিস সৈয়দ ও কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৭
কান্দির মোহনবাগান ময়দানের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

কান্দির মোহনবাগান ময়দানের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

মিছিলে খাপ খোলা পিস্তল নিয়ে দলীয় কর্মীদের সোল্লাস, মুখ পুড়িয়েছিল শাসক দলের। কান্দির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সেই ঘটনার পরে দলীয় নেতারা ঝেড়ে ফেলেছিলেন অভিযুক্তদের।

পক্ষকাল পরেও ক্ষতচিহ্ন যে রয়ে গিয়েছে, সোমবার, স্থানীয় মোহনবাগান ময়দানে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যে সে কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ফের। ২১ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনার জবাবদিহি করতেই যে তাঁর কান্দিতে আসা, এ দিন তার ইঙ্গিত মিলেছে শুভেন্দুর কথায়, ‘‘দু’সপ্তাহ পরেই ফের সভা করছি কান্দিতে। কারণ, ওই সভায় কংগ্রেস এবং একটি সংবাদ মাধ্যম পরিকল্পিত ভাবে কয়েক জনকে পিস্তল নিয়ে মিছিলে ঢুকিয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, অভিযুক্তেরা তৃণমূলের কর্মী নয়। এমনকী তাদের রাজনীতির সঙ্গে কোনও সংশ্রব নেই। তমলুকের সাংসদের কথায়, ‘‘ওরা সমাজবিরোধী। পরিকল্পিত ভাবে ওদের মিছিলে আনা হয়েছিল, এটা স্পষ্ট করে বলতেই সভায় এসেছি।”

তবে, ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছেন দলের মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল। অভিযুক্ত সব্যসাচী দাস, মাধব দাস ও দুঃসাশন ঘোষ ওরফে লেবু যে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’, ঘটনার পরে তা শোনা গিয়েছিল জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার গলায়। তা মেনেও নিয়ে উজ্জ্বল বলেন, ‘‘ধৃত তিন জনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ওরা আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত, এটাও সত্যি। কিন্তু অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।’’

যা শুনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘এর পরেও মানতে হবে ওরা তৃণমূলের কেউ নয়!’’ দলের এক জেলা নেতার মুখেও শোনা গিয়েছে, ‘‘উজ্জ্বলের সঙ্গে ওই দুষ্কৃতীদের ওঠা বসা তো জেলার সকলেরই জানা। এখন তোপ দেগে, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপালে হবে?’’

সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই গ্রেফতারের পরেও ওই তিন দুষ্কৃতীকে থানার লক-আপে রাখা হয়নি বলে জেলা পুলিশেরই এক কর্তা জানাচ্ছেন। ওই পুলিশ কর্তা জানাচ্ছেন, থানার দোতলার একটি ঘরে তাদের তিন জনকে রাখা রয়েছে। যে ঘরে, জেলা পুলিশের বড় কর্তা ছাড়া প্রবেশাধিকার নেই কারও। থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসার পরে ওই সন্ধ্যাতেই জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল থেকে তৃণমূলের কান্দি ব্লক সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখাও করতে গিয়েছিলেন। দলের মেজ-সেজ নেতাদের যাতায়াত তো লেগেই আছে।’’ পুলিশ হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মিলছে কী করে? জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, সি সুধাকর আশ্বস্ত করছেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়, আমি নিশ্চয় খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ উজ্জ্বল অবশ্য মানছেন এর মধ্যে তিনি একাধিকবার কান্দি থানায় গিয়েছেন। বলছেন, ‘‘কান্দি থানাতে আমি বিভিন্ন কাজ নিয়ে অনেক বার গিয়েছি। তবে, পুলিশ হেফাজতে থাকা কারও সঙ্গে দেখা করার মতো আমি নির্বোধ নই।’’

দলের অন্দরের খবর, উজ্জ্বল অস্বীকার করলেও, তিনি ধনঞ্জয়ের মাধ্যমে ওই তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ঘটনার পরে তিন জনকে ধনঞ্জয়ের গাড়িতে ‘গোপন ঠিকানায়’ পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁরই বলে জানাচ্ছেন দলের এক তাবড় জেলা নেতা। তিনি জানান, দেওঘরে একটি আশ্রমে (যেখানে উজ্জ্বল নিজেও শিষ্য) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাধবদের। পরে জেলার এক যুব নেতার নির্দেশ পেয়ে ফিরিয়ে এনে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় ওই তিন দুষ্কৃতীকে। যা শুনে উজ্জ্বলের জবাব, ‘‘দেওঘর দুষ্কৃতীদের থাকার জায়গা নয়।’’

অস্ত্র নিয়ে উল্লাসের ঘটনায় বিরোধী কংগ্রেস বা সংবাদ মাধ্যমের ‘পরিকল্পনা’ দেখছেন শুভেন্দু। অভিযুক্তরাও দলের কেউ নয় বলেই দাবি তাঁর। তবে, অভিযুক্তদের ‘সংশোধন’ করে দলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন উজ্জ্বল। বলছেন, ‘‘নিজেদের সংশোধন করে ওরা দলে ফেরার আবেদন জানালে তখন বিবেচনা করে দেখা যাবে।’’

Suvendu Adhikari Trinamool Kandi congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy