অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) নিয়ে রাজ্য সরকারের নতুন তালিকা ও বিজ্ঞপ্তিতে আদালত আপাতত স্থগিতাদেশ দিতেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, নিয়ম না মেনে চলতে গিয়ে রাজ্য সরকার ফের ধাক্কা খেয়েছে। অন্য দিকে, শাসক দলের তরফে পরোক্ষে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির মনোভাব নিয়ে।
হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৭৬টি মুসলিম শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করে যে ওবিসি তালিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তার উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য মহামান্য কলকাতা হাই কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ। রাজ্য সরকার তার সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কারণে বারবার সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে।’’ তাঁর অভিযোগ, মমতা ক্ষমতায় আসার আগে ২০% মুসলিম ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নতুন তালিকায় ৯০% মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ‘তোষণের রাজনীতি’ই স্পষ্ট করে। সেই সঙ্গেই কালীগঞ্জের প্রচার শেষে বিরোধী দলনেতা একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন। বিধানসভায় গত ১০ জুন ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যা বলেছিলেন, তার উপরে আলোচনা চেয়ে বিরোধী দলনেতা ওই চিঠি দিয়েছিলেন বিধানসভার সচিবকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তাঁর এক্স হ্যান্ড্লে লিখেছেন, ‘এটা কখনওই সামাজিক ন্যায়বিচার ছিল না। ছিল স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক তোষণ ও ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য সংরক্ষণ লুট করার নিন্দনীয় পদক্ষেপ’।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘ওবিসি মামলায় রাজ্য সরকার আবার অসভ্যতা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছিল আদালতে। নিজের জেদে কাজ সারতে চাইছিল আদালতের নির্দেশ না মেনে। বিধানসভায় কার্যত একটা ঘোষণাপত্র দিয়েই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে কোনও আলোচনা পর্যন্ত নেই। আগের আইন সংশোধনের চেষ্টাও করেনি। নিয়োগ বন্ধ হোক, ভর্তি বন্ধ থাক, রাজ্য সরকারের কিছু যায় আসে না! এখন আদালতে থাপ্পড় খেতে হল!’’
বিচারব্যবস্থার প্রতি ‘সম্মান জানিয়ে’ও এ দিনের স্থগিতাদেশের পরে বিচারপতি মান্থার ভূমিকা সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি ও শুভেন্দু যা নিয়ে রাজনীতি করতে ওৎ পেতে বসে আছেন, এই রায়ে সেই রসদ রয়েছে। বিচারপতি মান্থা অতীতেও রায় দিয়েছেন, যাতে শুভেন্দু নিরাপত্তা পেয়েছেন, রসদ পেয়েছেন।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি ও বিরোধী দলনেতা অনগ্রসর শ্রেণির বিরোধী। আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের কল্যাণের সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে বিকৃত প্রচার করছে বিজেপি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)