—ফাইল চিত্র।
শুধুই আর কোনও বাড়ি নয়। কাঁথা স্টিচ, পটশিল্প, এমনকি, হারিয়ে যাওয়া রান্নার রেসিপি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালিও কি শেষ পর্যন্ত হেরিটেজ মর্যাদা পাবে?
আপাতত সে আলোচনাই চলছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, বর্তমান হেরিটেজ আইনে বড়সড় সংশোধনী আনার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে হেরিটেজ-স্থাপত্যের বাইরে বেরিয়ে গানের ধারা, হারিয়ে যাওয়া রান্নার রেসিপি-সহ একাধিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে হেরিটেজ সংরক্ষণের পরিসর অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে হেরিটেজ-নীতি যে ভাবে হামাগুড়ি দিচ্ছে, প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে এক ধাক্কায় তা সাবালক হয়ে যাবে। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হেরিটেজ দিবস’-এর আগে হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় এমনই মত উঠে আসছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন অ্যাক্ট, ২০০১’ হল মূলত ‘বিল্ট হেরিটেজ’। অর্থাৎ, স্থাপত্যশৈলীর নিরিখে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত বা কোনও মনীষীর স্মৃতি বিজড়িত কোনও বাড়িকে হেরিটেজ মর্যাদা দিয়ে থাকে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বা কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি। কিন্তু সংশোধনের যে খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে, তাতে ‘বিল্ট হেরিটেজ’-এর বাইরে বেরিয়ে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ অর্থাৎ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য তথা হেরিটেজ স্থপতি পার্থরঞ্জন দাশ বলেন, ‘‘বর্তমান হেরিটেজ অ্যাক্টে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, তা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এ বার রাজ্য সরকার যেমনটা ঠিক করবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’বছর আগেও কমিশনের তরফে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছিল কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ বার শুধু রাজ্য হেরিটেজ কমিশনই নয়, বর্তমান হেরিটেজ আইনে যে সংশোধনী দরকার, তা নিয়ে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল আইআইটি, খড়গপুর ও শিবপুর আইআইইএসটি। এমনিতে নবদ্বীপ ও কোচবিহারকে হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারি স্তরে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সে বিষয়েই তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে।
দুই প্রতিষ্ঠানের তরফে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে সেখানেও বর্তমান হেরিটেজ আইনে সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, শহরে বা রাজ্যে হেরিটেজ সংক্রান্ত কাজকর্ম ‘বিল্ট হেরিটেজ’ নির্ভর হলেও সেখানে অনেক ফাঁক রয়েছে। যেমন, হেরিটেজ গ্রেড ঘোষণা নিয়ে প্রায়শই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হয় কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিকে। সে ক্ষেত্রে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-কে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে সার্বিক হেরিটেজ-নীতি নিয়ে যেন বিভ্রান্তি না তৈরি হয়। হেরিটেজ স্থপতি কমলিকা বসু বলছেন, ‘‘ইউনেস্কো ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজকে গুরুত্ব দেওয়ার পরে এ বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই খুব চর্চা চলছে। কিন্তু এমন অবস্থা না হয় যেন একটি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আরেকটির গুরুত্ব হ্রাস হয়ে যায়।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবটি সরকারি স্তরে গ্রহণ করা হলে আর একটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। যে যে বিষয়গুলিকে হেরিটেজ আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে, সরকার এক বার তাকে মান্যতা দিলে সেই-সেই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করলে হেরিটেজ সংরক্ষণের জগৎ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে সেখানে পেশাদারদের প্রয়োজন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy