Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Recruitment Scam

সাদা খাতায় শুধু নাম এবং রোল নম্বর লেখা, ৫৫-র মধ্যে তবু প্রাপ্তি ৫৩ আর ‘র‌্যাঙ্ক’ ২৭!

চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো এই ধরনের উত্তরপত্র জ্বলজ্বল করছে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে। তাতে শুধু তাঁর নাম আর রোল নম্বর লেখা। অথচ তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তাঁর র‌্যাঙ্ক ২৭।

প্রায় ফাঁকা ওএমআর শিট।

প্রায় ফাঁকা ওএমআর শিট।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

সাদা স্বচ্ছতা আর শুদ্ধতার প্রতীক। স্কুলের নিয়োগ-পরীক্ষার বেবাক সাদা থেকে যাওয়া অজস্র ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্রের নমুনা দেখলে এই প্রথাসিদ্ধ ধারণা ধাক্কা খেতে বাধ্য। কারণ, উত্তর লিখে খাতা ‘কলঙ্কিত’ না-করা সত্ত্বেও মোট ৫৫ নম্বরের মধ্যে কেউ কেউ পেয়ে গিয়েছেন ৫৩ এবং সেই সূত্রে ‘র‌্যাঙ্ক’ বেশ উপরের দিকে। অর্থাৎ উত্তর লিখতে না-পারুন, তাঁদের শিক্ষকতার চাকরির পথ যে প্রশস্ত, চাকরি পাওয়াটাই তার প্রমাণ!

চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো এই ধরনের উত্তরপত্র জ্বলজ্বল করছে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে। অন্য অনেকের মতো ওবিসি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকাভুক্ত এক চাকরিপ্রার্থী ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছেন। তাতে শুধু তাঁর নাম আর রোল নম্বর লেখা। অথচ তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তাঁর র‌্যাঙ্ক ২৭। অঙ্কের শিক্ষকের চাকরি করবেন বলে তিনি অঙ্কেরই পরীক্ষায় বসেছিলেন। একটিও উত্তর না-লেখায় তাঁর খাতা আগাগোড়া খালি এবং মোট ৫৫ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৫৩।

ফাঁকা খাতা জমা দেওয়া সত্ত্বেও অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকপদে চাকরিপ্রার্থীরা অনেক দিন ধরেই সরব। ২০১৬ সালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল। নিয়োগের পরীক্ষা হয় ২০১৮-য়। পরে অভিযোগ ওঠে, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে ঘুরপথে অনেক অযোগ্যকে নিয়োগ করা হয়েছে। আদালতে মামলা করার পরে সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশেই বুধবার রাতে নবম-দশমের ৯৫২ জনের বিকৃত উত্তরপত্র প্রকাশ করেছে এসএসসি।

প্রায় ফাঁকা ওএমআর শিট।

প্রায় ফাঁকা ওএমআর শিট।

সেখানেই সাদার মধ্যে ‘কলঙ্কের’ এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। নবম-দশমের যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, ওয়েবসাইট খুলে তাঁরা হতবাক হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বিচারে ‘পুকুর চুরি’ নয়, এটাকে বলা যায় ‘সাগর চুরি’। চাকরিপ্রার্থীরা জানান, এসএসসি-র প্রকাশিত মেধা-তালিকায় প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর নাম, রোল নম্বর এবং জন্ম-তারিখ দেওয়া ছিল। সেই রোল নম্বর ও জন্ম-তারিখ দিয়ে তাঁরা ওএমআর শিট খুলে এসএসসি-র দেওয়া মডেল উত্তরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন, বেশির ভাগ উত্তরই ভুল।

প্রকাশ ঘোষ নামে অঙ্কের শিক্ষকপদে অপেক্ষমাণ এক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, ‘‘একটি ওএমআর শিট অনুযায়ী এক ওবিসি তালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থী ইতিহাস বিভাগে ৮৮ র‌্যাঙ্ক করার সূত্রে চাকরি করছেন। অথচ তাঁর ওএমআর শিটে দেখা যাচ্ছে, তিনি পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাঁকে ৫৩ দেওয়া হয়েছে। আবার বাংলার শিক্ষকপদের এক প্রার্থী ছ’টি প্রশ্নের উত্তর লিখে পেয়েছেন ৫৩। তাঁর র‌্যাঙ্ক ১১।’’

ইলিয়াস বিশ্বাস নামে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকপদের এক প্রার্থী তথা আন্দোলনকারী এসএসসি-কে জানিয়েছেন, তাঁরা ভুল প্রশ্নের ক্ষেত্রে নম্বর বৃদ্ধির জন্য মামলা করেছিলেন। তাঁদের নম্বর বেড়েছে। ইলিয়াসের অভিযোগ, তাঁদের বর্ধিত নম্বর-সহ ওএমআর শিটও ওই ৯৫২ জনের তালিকায় উঠে গিয়েছে। সিবিআই বা এসএসসি-র ভুলে এটা হয়েছে বলে ওই চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Scam OMR Sheet Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE