E-Paper

আর কত দিন স্পিন বল করবেন, এ বার জোরে বল করুন! বিচারকের ভর্ৎসনা সিবিআইকে

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি দাসকে এ দিন বিশেষ আদালতে তোলা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৯
CBI.

বুধবার ইডি-র কৌঁসুলি আদালতেই বলেছিলেন, কেস ডায়েরিতে উল্লিখিত নামগুলি প্রকাশ্য আদালতে বলা সম্ভব নয়। প্রতীকী ছবি।

সিবিআই কেন শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের ‘মাথাদের’ কাছে পৌঁছতে পারছে না, বার বার সেই প্রশ্ন তুলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে ভর্ৎসনা করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক বৃহস্পতিবার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন, নিয়োগ দুর্নীতির বিশাল অঙ্কের টাকা যাঁদের কাছে পৌঁছেছে, তাঁদের ধরে আদালতে হাজির করানো হোক। বুধবার ইডি-র কৌঁসুলি এই আদালতেই বলেছিলেন, কেস ডায়েরিতে উল্লিখিত নামগুলি প্রকাশ্য আদালতে বলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সেই সব নাম কেস ডায়েরিতে দেখে নেওয়ার জন্য বিচারককে আর্জি জানান তিনি।

ক্রিকেটীয় ভাষার আশ্রয় নিয়ে বিচারক এ দিন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারকে বলেন, ‘‘আর কত দিন স্পিন বল করবেন? এ বার জোরে বল করুন। ওয়াসিম আক্রম জোরে বল করতেন।’’ ঘটনাচক্রে এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের নাম ওয়াসিম খান।

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি দাসকে এ দিন বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় নম্বরের শতাংশ বাড়ানোর জন্য ‘ফিক্সড রেট’ বা নির্ধারিত হার ছিল বলে জানায় সিবিআই। তাদের আইনজীবী বলেন, ‘‘নম্বর ৬৮% থেকে ৭২% করার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হত। ৭০% থেকে বাড়িয়ে নম্বর ৭২% করার জন্য টাকার অঙ্কও বেঁধে দেওয়া ছিল। এই নিয়োগ দুর্নীতিতে এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারীও জড়িত।’’ লেনদেনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘গোটা দুর্নীতিতে দু’টি স্তম্ভ রয়েছে। একটি স্তম্ভ টাকা নিয়েছে। অন্য স্তম্ভের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মাঝখানে রয়েছেন বাঁকা পথে চাকরি নেওয়া অযোগ্য প্রার্থীরা, যাঁরা টাকা দিয়েছেন। আমরা স্তম্ভগুলি জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছি।’’ বিচারক ওই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘অভিযোগগুলো সময়ে সময়ে বদলে যাচ্ছে। যাঁদের কাছে টাকা পৌঁছেছে, তাঁদের হাজির করুন।’’

এ দিন আদালত-চত্বরে তাপস বলেন, ‘‘কুন্তলের কাছে নতুন গল্প শুনুন।’’ এক সপ্তাহ আগে ব্যাঙ্কশাল আদালত চত্বরে কুন্তল অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জোর করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ওই দলের শীর্ষ নেতাদের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছে। এ দিন আদালত-চত্বরে কুন্তল জানান, প্রেসিডেন্সি জেল থেকে এই অভিযোগ জানিয়ে বিচারককে চিঠিও লিখেছেন তিনি। নিজের নির্দেশনামায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ, ইডি চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ জানিয়ে কুন্তল প্রেসিডেন্সি জেলের মাধ্যমে একটি চিঠি দিয়েছেন আদালতে।

কুন্তলের চিঠি সম্পর্কে বিচারক প্রশ্ন করেন, ওই অভিযুক্ত বা তাঁর আইনজীবী এত দিন এজলাসে এই ধরনের অভিযোগ করেননি কেন? কুন্তলের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমি মক্কেলের সঙ্গে জেলে কথা বলতে পারছি না।’’ কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে বিচারক তদন্ত সংস্থার কাছে জানতে চান, বর্তমানে কোন অফিসারেরা জেলে গিয়ে কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন? সিবিআইয়ের তরফে বিচারককে জানানো হয়, সব কেস ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ। শুনানি শেষে কুন্তল-সহ তিন জনকেই ২০ এপ্রিল পর্যন্ত হেফাজতে পাঠায় আদালত।

রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রাজ্যের শেখানো বুলিই বলছেন কুন্তলেরা। তৃণমূলে কে যে এখন রাজসাক্ষী, কে রাতের বেলা দিল্লিতে যোগাযোগ করছেন, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!’’ রায়গঞ্জে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘কুন্তলকে চাপ দিয়ে কেন ভাইপোর নাম বলানো হবে? শহিদ মিনারের মঞ্চে ভাইপোর বক্তব্যের পরেই তো নাটক চলছে!’’

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। মন্তব্য করব না। বিচারক নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam CBI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy