Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Kuntal Ghosh

কুন্তলের অতি প্রভাবশালী ‘কাকু’র খোঁজ

গ্রেফতারের পর থেকেই হুগলির যুব নেতা কুন্তল জানিয়ে আসছেন, নিজের জন্য দশ শতাংশ কমিশন রেখে নিয়োগ দুর্নীতির টাকার মোটা অংশ তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

Picture of Kuntal Ghosh.

যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

  শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩০
Share: Save:

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সরাসরি যোগাযোগ স্পষ্ট হয়েছে বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি। পার্থ ছাড়াও কুন্তলের মাথায় আর কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত আছে, তার খোঁজ করছে ইডি। তাদের দাবি, বিশেষ করে খোঁজ চলছে এক ‘অতি প্রভাবশালী’ ব্যক্তির, কুন্তল যাঁকে বিভিন্ন সময়ে কর্মপ্রার্থী-সহ বিভিন্ন জনের কাছে ‘কাকু’ বলে অভিহিত করে নিজের যোগাযোগের গুরুত্ব ও গভীরতা বোঝাতে চাইতেন।

Advertisement

আদালতে জমা দেওয়া যে-নথিতে ইডি পার্থের সঙ্গে কুন্তলের সরাসরি যোগাযোগের কথা বলেছে, তার ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের পাঁচ ও ছয়ের পাতায় তদন্তকারী অফিসারের দাবি, শুধু পার্থ নন, কুন্তলের মাথায় ‘হাইলি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল’ বা অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তির হাত আছে। ওই ব্যক্তির সহায়তাতেই নাকি কুন্তল সমানে নিয়োগ দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। ইডি-র ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিজের কমিশন বাদ দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ওই ব্যক্তির কাছেই পৌঁছে দিয়েছেন কুন্তল।

ওই ‘কাকু’, ওই ‘অতি প্রভাবশালী’ ব্যক্তিটি কে, সেই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি ইডি-কর্তারা। তদন্তকারীদের দাবি, ওই অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগের কয়েকটি সূত্র পাওয়া গিয়েছে। গ্রেফতারের পর থেকেই হুগলির যুব নেতা কুন্তল জানিয়ে আসছেন, নিজের জন্য দশ শতাংশ কমিশন রেখে নিয়োগ দুর্নীতির টাকার মোটা অংশ তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তলের বাজেয়াপ্ত করা ধূসর ডায়েরিতে নেতা, মন্ত্রী-সহ বিভিন্ন প্রভাবশালীর নাম পাওয়া গিয়েছে।

বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ গোপাল দলপতিকে কুন্তলের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাপসের বয়ান অনুযায়ী, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল নাকি আশ্বাস দিতেন, ‘কালীঘাট ও কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’ ইডি-র দাবি, পরে গোপাল ও তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কুন্তলের ‘কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির মামলার তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। তাই সহজেই ওই ‘কাকু’-কে শনাক্ত করা গিয়েছে।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, চাকরির টোপ দিয়ে কুন্তল যে-সব কর্মপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের কয়েক জনকে প্রশ্ন করে জানা গিয়েছে, কুন্তলের অফিসের কর্মীরাও তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘দাদা কালীঘাট ও কাকুর কাছে গিয়েছেন। সব ব্যবস্থা করছেন।’ ইডি-র দাবি, অনেক চাকরিপ্রার্থী অফিসে কুন্তলের খোঁজ না-পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করলেও কুন্তল নাকি বলতেন, ‘কালীঘাটে আছি। পরে ফোন করুন।’

তাপসও সোমবার বলেন, ‘‘আমাকেও একাধিক বার কালীঘাট ও কাকুর কথা বলেছেন কুন্তল। পরে আমিও কাকুর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তদন্তকারীরা ঠিক ব্যক্তিকেই কাকু বলে শনাক্ত করেছেন।’’

ইডি-র অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকার একটি অংশ পার্থের কাছে পৌঁছেছে। অন্য এক অংশ গিয়েছে ওই প্রভাবশালী নেতা এবং মাঝারি মাপের কিছু যুব নেতানেত্রীর কাছে। কুন্তল এক দিকে পার্থ এবং অন্য দিকে ওই প্রভাবশালীর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে টাকা পৌঁছে দিতেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি।

তদন্তকারী অফিসারদের ব্যাখ্যা, তখন পার্থ ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ফলে পার্থকে ‘নজরানা’ না-দিয়ে কোনও ভাবেই বেআইনি নিয়োগ সম্ভব হত না। পাশাপাশি অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবনের উন্নতির পথ তৈরি করছিলেন কুন্তল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.