Advertisement
১০ মে ২০২৪
Recruitment Scam

দুর্নীতি চক্রে ‘ঈশ্বর’ খুঁজে বার করুন: বিচারক

সিবিআই হেফাজত থেকে এ দিন হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডল এবং অন্যতম মিড্‌লম্যান বলে অভিযুক্ত নীলাদ্রি ঘোষকে আদালতে তোলা হয়।

Picture of Kunal Ghosh and Tapas Mondal.

কুন্তল ঘোষ এবং তাপস মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

সাহিত্যের পরে দর্শন। শেক্সপিয়রের পরে শ্রীরামকৃষ্ণ। তারও পরে ‘ঈশ্বর’ সন্ধানের কথা উঠে এল শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। এবং সেই কথা তুললেন খোদ বিচারকই।

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কিছু অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগের কথা উঠছে বারংবার। মূলত সেই প্রভাবশালীদের খুঁজে বার করার প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার শ্রীরামকৃষ্ণের কথা তোলেন আলিপুরের সিবিআই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়। ঠিক যেমন বুধবার এই মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী ও ছেলেকে জেলে পাঠানোর আগে মা ও ছেলের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের কথা তুলেছিলেন তিনি।

এ দিন শুনানি চলাকালীন কেস ডায়েরি দেখার পরে বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে এক বার তাঁর ভক্তেরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘গুরু’ কে? শ্রীরামকৃষ্ণ তার জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘ঈশ্বর’। আপনারা নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ‘ঈশ্বর’-কে খুঁজে বার করুন আগে।’’

সিবিআই হেফাজত থেকে এ দিন হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডল এবং অবৈধ নিয়োগ কাণ্ডের অন্যতম মিড্‌লম্যান বলে অভিযুক্ত নীলাদ্রি ঘোষকে আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তিন জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ করে ৯ মার্চ পর্যন্ত তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিবিআইয়ের আইনজীবী এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, ‘‘তিন জনকে মুখোমুখি বসিয়ে দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। তিন জনেই জিজ্ঞাসাবাদে প্রভাবশালীদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’’

প্রভাবশালী যোগের বিষয়ে সম্প্রতি এই বিচারক সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘পনির মশালা তৈরি করছেন। কিন্তু সেখানে পনিরটাই নেই।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনেই বলেন, “নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নানা প্রজাতির পনির পাওয়া গিয়েছে। তথ্যপ্রমাণ হাতে এলেই সেই সব পনিরকে হেফাজতে নেওয়া হবে।’’

কুন্তলের জামিনের আবেদন জানিয়ে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘পনির দূরের কথা, রান্না করার জন্য আগুনই নেই সিবিআইয়ের!’’ তাঁর দাবি, কুন্তলের বাড়ি থেকে কোনও ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্র উদ্ধার হয়নি। তাপসের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেল মোটেই প্রভাবশালী নন। তিনি অসুস্থ। তাঁর হাই সুগার। ইনসুলিন নিতে হয়। তিনি কোনও ভাবেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করবেন না। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’’

এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে কুন্তল বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির টাকা হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। হৈমন্তী হলেন গোপাল দলপতির স্ত্রী।’’ সিবিআইয়ের দাবি, মুম্বইয়ের ঠিকানায় আরমান গঙ্গোপাধ্যায় (গোপালের পরিবর্তিত নাম) ও হৈমন্তীর নামে একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেনের সূত্র মিলেছে। হৈমন্তী প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে গোপালের সঙ্গে এ দিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

এ দিন নিজাম প্যালেস থেকে আদালতের পথে ‘কালীঘাটের কাকু’ প্রসঙ্গে তাপস বলেন, ‘‘কুন্তল সব জানে। কুন্তলকে জিজ্ঞেস করুন। ও-ই বলত, কালীঘাটের কাকু সুজয় ভদ্র।’’ আর কুন্তল বলেন, ‘‘কালীঘাটের কাকু সুজয় ভদ্রকে আমি চিনি না। আমার একটাই কাকু। তিনি আমার বাবার ভাই সুনীলকুমার ঘোষ।’’ যদিও সিবিআইয়ের দাবি, তাপসের বয়ান অনুযায়ী কালীঘাটের কাকুর কথা বলেছিলেন কুন্তলই। যাঁকে বলা হচ্ছে ‘কালীঘাটের কাকু’, সেই সুজয় অবশ্য বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, কালীঘাটের কাকু কথাটির উৎস তিনি জানেন না।

কেস ডায়েরি দেখার পরে বিচারক এ দিন তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান, ‘‘মিস্টার হোসেন নামে এক ব্যক্তির নাম উঠেছে। বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছিল। তাঁকে কেন গ্রেফতার করলেন না?” সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমাদের অন্যতম সাক্ষী। তাঁর তথ্য অনুযায়ী তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Scam Kuntal Ghosh Tapas Mandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE