তিন শিশুকে স্ট্রেচারে নিয়ে ছুটছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। উপকূল পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্সের অন্য লোকেরা উপকূলবর্তী মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ দূরত্বের ত্রাণ শিবিরে। চারিদিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতা!
বুধবার এমনই দৃশ্য দেখলেন দিঘার দত্তপুর ও গদাধরপুরের বাসিন্দা-সহ উপকূলবাসীরা। অনেকের মনেই প্রথমে ছিল প্রশ্ন— ‘‘কোনও বিপর্যয় ঘটে যায়নি তো!’’ তবে পরে জানা যায়, বিপর্যয় নয়, উপকূলবর্তী এলাকায় সুনামি বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে কী করণীয়, এ ছিল তারই মহড়া।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্যোগে, রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ সহযোগিতায় দত্তপুর ও গদাধরপুরে এ দিন সুনামির ‘মক ড্রিল’ হয়। সঙ্গে ছিলেন নুলিয়া, পুলিশ, দমকলকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং উপকূলবাসীরা। এ দিন প্রথমে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মহড়া শুরু হয়। পরে ১২টা ৫৭ মিনিটে এবং ২টো ২০ মিনিটে সুনামি হয়েছে, এমনটা ধরে নিয়ে মহড়া হয়। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ডিসেম্বর জাপানে হয়েছিল ভয়াবহ সুনামি। ওই ধরনের ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন হতেই এ দিনের মহড়া।
স্থানীয় এক বাসিন্দা রাজু কুণ্ডু বলেন, ‘‘সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আমরা থাকি। সমুদ্র ঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সবচেয়ে ভয় পাই। এ দিন সুনামির মক ড্রিল হওয়ার ফলে আমরা অনেকটা সচেতন হয়েছি। এই রকম মক ড্রিল হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। এবার আমরা আরও সজাগ এবং সতর্ক থাকব।’’
এ দিনের মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, রামনগর-১ এর ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক অভিজিৎ জানা, রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র, সহ-সভাপতি নিতাই চরণ সার, স্থানীয় পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কল্যাণ জানা প্রমুখ।
রামনগর-১ এর বিডিও আশিসকুমার রায় বলেন, ‘‘সাধারণত উপকূলবর্তী এলাকায় সুনামির ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। সুনামি হলে মানুষকে কীভাবে উদ্ধার করা হবে, কীভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই জন্য এই মকড্রিল। মানুষকে সচেতন করারই আমাদের উদ্দেশ্য।’’
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক সহদেব দাস বলেন, ‘‘সুনামি হলে যেভাবে মানুষকে উদ্ধার করা হয়, এ দিন আমরা সেভাবে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের উদ্ধার করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য।’’ সিআইএসএফ ইনস্পেক্টর ভীমসেন রায় বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাউকে বলে আসে না। তবে আমরা মানুষকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে যাতে কিছুটা প্রস্তুত থাকতে পারি, তার জন্য এই উদ্যোগ।’’