Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন ‘নকল’ নির্যাতিতারা? সংশয় পদ্মপ্রার্থী রেখার! প্রকাশ্যে সন্দেশখালির নয়া ভিডিয়ো

সন্দেশখালি নিয়ে স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই আবহে সন্দেশখালি নিয়ে আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল। যদিও এই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ১০:০০
ভাইরাল ভিডিয়োয় রেখা পাত্র (বাঁ দিকে) এবং মাম্পি দাস (সবুজ চাদর)। যদিও এই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

ভাইরাল ভিডিয়োয় রেখা পাত্র (বাঁ দিকে) এবং মাম্পি দাস (সবুজ চাদর)। যদিও এই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ছবি: সংগৃহীত।

সন্দেশখালি নিয়ে ৩২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি স্টিং ভিডিয়োকে ঘিরে গত শনিবার থেকে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই আবহে সন্দেশখালি নিয়ে আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল। যদিও এই ভিডিয়োটিরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। নতুন এই ভিডিয়োয় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করা নির্যাতিতাদের পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশখালির আর এক আন্দোলনকারিণী মাম্পি দাসও। তবে ভিডিয়োটি কবে এবং কোথায় তোলা, তা স্পষ্ট নয়।

ভিডিয়োর শুরুতেই রেখার পাশে দাঁড়ানো মাম্পিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে সন্দেশখালির কিছু নির্যাতিতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা হলে আমরা কারা?” পাশে দাঁড়ানো আর এক মহিলার সংযোজন, “আমরা তো সন্দেশখালির আন্দোলনকারী বা নির্যাতিতা। আমরা সবাই তো গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী বা পিএম স্যরের সঙ্গে দেখা করতে। তা হলে আমাদেরকে ছাড়া রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে কারা গেল? আমরা তা হলে কারা?”

এই ভিডিয়োতেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ রেখা বলছেন, “আমরা নির্যাতিতা মেয়েরা সন্দেশখালিতেই পড়ে রয়েছি। তা হলে আমাদের মুখ হয়ে কারা গিয়েছে (রাষ্ট্রপতি ভবনে), এটা তো জানার প্রয়োজন রয়েছে। আর ওখানে যে রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে গিয়েছে, আমাদের কিছু জানিয়েছে? আমরা তো নির্যাতিতা, আমরাই আন্দোলনের মেন (প্রধান) মুখ।”

তবে কাদের ‘নির্যাতিতা’ সাজিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে কেবল সংশয়ই নয়, ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাও উস্কে দিয়েছেন রেখারা। দাবি করেছেন যে, ‘নকল’ নির্যাতিতাদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে বিজেপি নেতা অনুপ দাসের হাত রয়েছে। এই অনুপ আবার শাহজাহান শেখের ‘ঘনিষ্ঠ’, অধুনা জেলবন্দি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিতেন বলে ভিডিয়োয় অভিযোগ করেছেন মাম্পি। রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া এক অভিযোগকারিণী ‘তৃণমূলের লোক’ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রেখা-মাম্পিরা। ভাইরাল ভিডিয়োটিতে মাম্পি বলছেন, “খবর পেয়েছি যে অনুপ দাস নিয়ে গিয়েছেন। অনুপ দাস তো ভিতরে ভিতরে শিবু হাজরার কাছ থেকে মাস গেলে ১০ হাজার টাকা করে পয়সা নিত। খবর আছে ওঁর সঙ্গে পদ্মা মণ্ডলও গিয়েছেন। তা হলে কি এটা বুঝব যে, পদ্মা মণ্ডল টিএমসির লোক? উপরে উপরে বিজেপি করে?” বিজেপির একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, অনুপ এক সময় বিজেপি করলেও পরে তাঁকে দল থেকে ‘বার করে দেওয়া হয়’।

নতুন এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যে অনুপ দাসের কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে আমি চিনি। উনি দীর্ঘ দিনের বিজেপি কর্মী।” সন্দেশখালির আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল ছিল না বলে দাবি করে শমীকের সংযোজন, “যাঁরা (ভিডিয়োয়) এই বক্তব্য রাখলেন, তাঁরা এই আন্দোলনের মধ্যে নতুন এসেছেন। রেখা পাত্রও নতুন এসেছেন। ছোট ছোট দ্বীপে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করেছিলেন। এর মধ্যে কোনও বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম ছিল না। ভবিষ্যতেও এই আন্দোলন হবে।” বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্ধমান দুর্গাপুরের পদ্মপ্রার্থী দিলীপ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “কে জানে যে, যাঁদের সামনে আনা হয়েছে, তাঁরাই নির্যাতিতা? যাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না, তাঁরা কি নির্যাতিতা নন? তাঁরা রাষ্ট্রপতির সামনে মুখ খুলেছেন। এখানে খোলেননি। সন্দেশখালিতে পাড়ায় পাড়ায় নির্যাতিতা রয়েছেন।”

নতুন ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, “রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলকে বদনাম করার জন্য সন্দেশখালির চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছিল। মহিলাদের সম্ভ্রমকে ভোট বৈতরণী পার করতে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। সেই মুখোশ খুলে গিয়েছে। আরও বেআব্রু হচ্ছে।” সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, “পুরোটাই নাটক ছিল। কখনও রেখা পাত্র, কখনও অন্য মহিলাদের নিয়ে গিয়ে বলানো হয়েছে আমরা নির্যাতিতা। বিজেপি এই ষড়যন্ত্রটা করে সন্দেশখালির মহিলাদের অপমান করেছে।” সিপিএম অবশ্য বিজেপি এবং তৃণমূলকে দু’পক্ষই একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছে। সন্দেশখালির প্রাক্তন বাম বিধায়ক তথা এ বারে বসিরহাটের প্রার্থী নিরাপদ সর্দার বলেন, “আন্দোলন বাস্তবসম্মত ছিল। ওখানে জমি লুট হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট হয়েছে। মা-বোনেরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরে অত্যাচার হয়েছে। তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তৃণমূল আর বিজেপি মিলে এই আন্দোলনটাকে ভাঙল।”

গত ১৫ মার্চ সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সন্দেশখালির ১১ জন ‘নির্যাতিত’। এঁদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ জন মহিলা এবং ছ’জন পুরুষ। শাহজাহান এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর কাছে প্রতিকার চান ওই ১১ জন। রাষ্ট্রপতি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি, দুঃখপ্রকাশও করেন। অন্য দিকে, গত ৬ মার্চ বারাসতে জনসভা করার পর সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভিডিয়োয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্যাতিতাদের দেখা করার প্রসঙ্গটি ওঠায় কেউ কেউ মনে করছেন ভিডিয়োটি ওই সময়েই তোলা হয়ে থাকতে পারে। ওই সময় বসিরহাটের পদ্মপ্রার্থী হিসাবে রেখার নামও ঘোষণা করেনি বিজেপি।

সন্দেশখালির প্রথম ভাইরাল ভিডিয়োয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বসিরহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ওই পদ্মনেতা। বিজেপি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ভিডিয়োকে সাজানো এবং বিকৃত বলেছে। গঙ্গাধরও কণ্ঠস্বর বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন। এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সন্দেশখালির এক মহিলার বক্তব্যের ভিডিয়ো বুধবার প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল থানায়। না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর তিনি সবটা জানতে পারেন। মহিলার আরও দাবি, পরে যখন তিনি মামলা তুলতে চান, তাঁকে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়। ভিডিয়োয় অভিযোগকারিণীর দাবি, এ সবের নেপথ্যে ছিলেন মাম্পি দাস এবং পিয়ালি দাস। এই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

Viral Video Rekha Patra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy