Advertisement
E-Paper

মেদিনীপুরে ফুটবল মাঠে ঢুকে রেফারির পেটে লাথি তৃণমূল পুরপ্রধানের ভাইপোর! ভিডিয়ো ছড়াতেই গ্রেফতার করল পুলিশ

মেদিনীপুর শহরে শুক্রবার ছোটদের একটি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে মাঠে ঢুকে পড়েন তৃণমূল নেতার ভাইপো। রেফারির পেটে লাথি মারেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ১৩:২৮
মেদিনীপুরের মাঠে রেফারিকে হেনস্থার অভিযোগ তৃণমূল নেতার ভাইপোর বিরুদ্ধে।

মেদিনীপুরের মাঠে রেফারিকে হেনস্থার অভিযোগ তৃণমূল নেতার ভাইপোর বিরুদ্ধে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মেদিনীপুরে ফুটবল খেলা চলাকালীন মাঠের ভিতর ঢুকে পড়লেন তৃণমূল নেতার ভাইপো। রেফারিকে মারলেন লাথি! ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার ধৃতকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানে ধৃতের দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। বিজেপির তরফে সেই ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শাসকদলকে কটাক্ষ করেছেন। অভিযুক্তের নাম রাজা খাঁ। তিনি স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খাঁয়ের ভাইপো। খেলার শেষে খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায় এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার সঙ্গে তাঁকে ছবিও তুলতে দেখা গিয়েছে।

শুক্রবার মেদিনীপুর শহরের চার্চ স্কুলের মাঠে ছোটদের ফুটবলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রেফারির ভূমিকায় ছিলেন লক্ষ্মণ মাণ্ডি। খড়্গপুর সাব-ডিভিশন রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তিনি, পেশায় স্কুলশিক্ষক। ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মাঠে ঢুকে রেফারির সঙ্গে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন রাজা। তেড়ে যাচ্ছেন। ধাক্কাধাক্কিও করছেন। মাঠে উপস্থিত অনেকেই তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। একসময় রেফারির পেটে সজোরে লাথি মারেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজার দল খেলছিল। বিপক্ষের একটি গোলকে কেন্দ্র করে বচসার সূত্রপাত। জোর করে সেই গোল বাতিল করানো হয়। অভিযোগ, রাজা গায়ের জোরে রেফারির উপর হম্বিতম্বি করে গোলটি বাতিল করিয়েছেন। রাজার বাবা হিমাদ্রি খাঁ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি।

শুভেন্দু এই ভিডিয়ো পোস্ট করে বাংলার নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনেছেন। লিখেছেন, ‘‘রেফারিকে কুরুচিকর আক্রমণ তৃণমূলের সংস্কৃতি। তা ভোটের ময়দানে রেফারির ভূমিকায় থাকা জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণই হোক বা স্থানীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় এই পুঁচকেপাঁচকা তৃণমূলী রাজা খান হোক।’’ শুভেন্দু জানিয়েছেন, ওই রেফারি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তফসিলি জাতি ও উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার উপযুক্ত ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিন্দনীয় ঘটনা। কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। কিন্তু তৃণমূল নেতার ভাইপো বলে তাঁর দায় কেন তৃণমূলকে নিতে হবে? ইনদওরে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ছেলে আকাশ বিজয়বর্গীয় ব্যাট দিয়ে সরকারি আধিকারিককে পিটিয়েছিল। বিজেপির কেউ নিন্দাও করেনি। ওদের মুখে জ্ঞানের বাণী শুনব না। বাংলায় আইনের শাসন আছে। ব্যবস্থা হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় বলেন, ‘‘মাঠে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। খেলায় রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কোনও সিদ্ধান্ত আমার মনের মতো না-ও হতে পারে। কিন্তু তাঁর গায়ে হাত তোলা অপরাধ। যাঁকে মারা হয়েছে, তাঁর আইনের পথে হাঁটা উচিত। যে কমিটি তাঁকে নিয়োগ করেছে, তাদের কাছেও অভিযোগ জানানো উচিত। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। রাজা খানের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। দলের কোনও কর্মসূচিতেও তিনি থাকেন না।’’

কাকাকেও পাশে পাননি অভিযুক্ত। মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খেলার মাঠের ধারেকাছে যাইনি। এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। সকালে ঘটনার ভিডিয়ো আমি দেখেছি। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। যে এই কাজ করেছে, অবিলম্বে তাঁর রেফারির কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সম্পর্কে সে আমার ভাইপো হতে পারে। কিন্তু অন্যায় করে কেউ ছাড় পাবে না।’’ খেলার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন বিধায়ক দীনেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি অল্প সময়ের জন্য মাঠে গিয়েছিলাম। এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি। এটা নিয়ে বলতে পারব না।’’

পশ্চিমবঙ্গ রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা চিত্তদাস মজুমদারের কথায়, ‘‘যে কোনও স্তরের খেলাতেই রেফারিকে মারা গর্হিত অপরাধ। খেলার বাইরে থেকে ঢুকে রেফারিকে আক্রমণ সমর্থন করা যায় না।’’

midnapore TMC referee BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy