সভার পথে মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দেমারি ফেরিঘাটে তোলা নিজস্ব চিত্র (বাঁ দিকে)। ফিরোজা বিবি ও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি তুলেছেন সুদীপ আচার্য ( ডান দিকে)।
পাশের জেলা জঙ্গলমহলে বারবার ছুটে এসেছেন তিনি। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের পর আন্দোলনের আতুঁড়ঘর নন্দীগ্রাম হাতে গোনা কয়েকবারই কাছাকাছি পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে তিন দিনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তিনি নন্দীগ্রামকে ভুলে যাননি।
সোমবার নন্দীগ্রামের তেখালিতে প্রশাসনিক সভায় ভাষণ দিতে গিয়েও তাই বারবার তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কখনও নন্দীগ্রামকে ভুলে যাই না। আমি মনে করি আমার জীবনে যত আন্দোলন করেছি তার মধ্যে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের আন্দোলন জীবনের একটা বড় সময় জুড়ে কেটেছে। এই তেখালির সেতুতে একসময় কতবার এসেছি। তেখালির সেতু থেকে আমাদের দিকে গুলি চালানো হয়। এখানকার মা-বোনেরা দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে আগলে রেখেছিল যাতে আমার গায়ে গুলি না লাগে। এটা আমি কখনওই ভুলতে পারিনি।’’
এ দিন প্রশাসনিক সভায় নন্দীগ্রাম-সহ জেলায় উন্নয়নের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, বন্যা প্রতিরোধে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কার করা হয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন করা হয়েছে। আগামী দিনে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ হলে দুই মেদিনীপুরে বন্যারোধ করা যাবে। বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, নন্দীগ্রামের রাস্তাঘাট, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ নন্দীগ্রামে আমরা প্রচুর কাজ করেছি।’’
নন্দীগ্রামে আসার আগে মুখ্যমন্ত্রী নয়াচরে গিয়েছিলেন শিল্পপতিদের নিয়ে। নন্দীগ্রামের প্রশাসনিক সভায় মমতা বলেন, ‘‘নয়াচরে ফিসারিজ ভিলেজ, ইকো ট্যুরিজম গড়া এবং সোলার কিছু করা যায়নি। এখানে কেমিক্যাল হাব হবে না। কিন্তু আমি নন্দীগ্রাম এসেছি যখন তখন কিছু তো একটা দিতে হবে। নন্দীগ্রামে একটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল গড়া হবে। এজন্য ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আর এখানে শহিদদের স্মরণে শহিদের স্মারক-সহ একটি কালচারাল সেন্টার, স্ট্যাচু মেমোরিয়াল গড়া হবে। তথ্য সংস্কৃতি দফতর এটা করবে।’’
এ দিন প্রশাসনিক সভায় মমতা জেলায় ১০৬ টি প্রকল্প রূপায়ণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ও নতুন ৪৮ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন।
এর মাঝেই তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে নতুন বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। বক্তব্যের শেষলগ্নে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আজ এখানে একটা কথা বলতে চাই। আপনারা অভয় দিচ্ছেন তো?’’ জনতা সায় দিতেই মমতার ঘোষণা, ‘‘আমি চাই আগামী দিনে শুভেন্দু এখান থেকে জিতে আমার মন্ত্রিসভায় কাজ করুক। নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য, বাংলার মানুষের জন্য কাজ করুক।’’
ততক্ষণে নেত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শুভেন্দু। করজোড়ে মাথা নীচু করে মমতার কথায় সম্মতি দেন তিনি। এরপর মমতা ডেকে নেন নন্দীগ্রামের বর্তমান বিধায়ক শহিদ-জননী ফিরোজা বিবিকে। দু’জনকে পাশে দাঁড় করিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘এঁদের একটু অদলবদল করে দেব।’’’
এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দুকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। আপাত ভাবে এই সিদ্ধান্ত শুভেন্দুকে আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়ার পদক্ষেপ বলে মনে হলেও তৃণমূলের অন্দরেই ভাসছে অন্য ব্যাখ্যা। দলেরই একাংশের মতে, আসলে শুভেন্দুকে রাজ্যের মন্ত্রী করে নিজের করায়ত্ত রাখতে চাইছেন মমতা। জেলা নেতারাও অনেকে বলছেন, ‘‘এটা দলনেত্রীর কৌশল।’’ মুখে অবশ্য নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন সকলে। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর কথায়, ‘‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’’ শুভেন্দুর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও বলছেন, ‘‘শুভেন্দু এলে মন্ত্রিসভা আরও সমৃদ্ধ হবে। ও বয়সে তরুণ, কাজের উদ্যমও রয়েছে।’’
মমতার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতারা। জমি আন্দোলনের নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘নেত্রী ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা একে পূর্ণ সমর্থন করছি।’’ নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহেরের বক্তব্য, ‘‘নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত আমরা মান্য করে চলব।’’ তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল, স্থানীয় নেতা পীযূষ ভুঁইয়া, স্বদেশ দাসরাও শুভেন্দুকে মন্ত্রিসভায় আনার
সিদ্ধান্তে খুশি।
এ দিনের সভায় রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ শিশির অধিকারী-সহ জেলার অধিকাংশ বিধায়ক হাজির ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy