Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

মুনশিয়ানা আছে নামকরণে? নাম দিন ঘূর্ণিঝড়ের

কিন্তু এই এলাকার আট দেশের দেওয়া ৬৪ নামের তালিকা ফুরিয়ে আসছে। বাকি আছে মাত্রই সাতটি নাম। যদিও ঘূর্ণিঝড় তৈরির বিরাম নেই। আগামী দিনে এই এলাকায় তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়দের নাম কী হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। মৌসম ভবনের খবর, শীঘ্রই নতুন নামের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০৫:৩৮
Share: Save:

ওড়িশাকে বিপর্যস্ত করে সদ্য বিদায় নেওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ‘ফণী’ নামটি দিয়েছিল বাংলাদেশ। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় নামকরণের রেওয়াজ শুরু হওয়ার পরে ২০০৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম নামটি তারাই দিয়েছিল। সেই নামটি ছিল ‘অনিল’।

কিন্তু এই এলাকার আট দেশের দেওয়া ৬৪ নামের তালিকা ফুরিয়ে আসছে। বাকি আছে মাত্রই সাতটি নাম। যদিও ঘূর্ণিঝড় তৈরির বিরাম নেই। আগামী দিনে এই এলাকায় তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়দের নাম কী হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। মৌসম ভবনের খবর, শীঘ্রই নতুন নামের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে।

সেই নামকরণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ নাগরিকেরাও যোগ দিতে পারেন বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘শীঘ্রই নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে। নাগরিকেরা তাঁদের প্রস্তাবিত নাম আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন।’’ আবহবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রের খবর, দিনক্ষণ স্থির হলে ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

আবহবিদেরা জানান, নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। যেমন, এমন নামই দেওয়া উচিত, যা ছোট হবে এবং সহজে উচ্চারণ করা যাবে। নামের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে এবং সেই শব্দে কোনও রকম ব্যঙ্গ বা বিদ্রুপ থাকলে চলবে না। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের নানান তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত, মানুষের মতোই প্রতিটি ঝড়কে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা এবং তার সবিস্তার তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট নাম দিলে মানুষের পক্ষেও ঘূর্ণিঝড়ের নাম মনে রাখা এবং তার সম্পর্কে সচেতন হওয়া সহজ হয়। একসঙ্গে দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও বিভ্রান্তি তৈরি হয় না। কোনও ব্যক্তির নামেও ঘূর্ণিঝড় চিহ্নিত করা হয় না। কেউ কেউ বলছেন, ভাগ্যিস হয় না! তা যদি হত, এই ব্যক্তিপূজার দেশে নেতানেত্রীদের নামও ঝড়ের তালিকায় ঢুকে পড়ত।

নামকরণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকার (আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর যার অন্তর্ভুক্ত) আটটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মলদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষার ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। তার পরে যৌথ বৈঠকে নাম-তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তালিকা তৈরি হয় দেশের নামের ইংরেজি আদ্যক্ষরের ক্রমানুসারে এবং সেই তালিকা ধরেই দেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম। এই সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে মৌসম ভবনের অধীন দিল্লির ‘রিজিওনাল স্পেশ্যালাইজ়ড মেটেরিওলজিক্যাল সেন্টার’।

মৌসম ভবনের তথ্য অনুযায়ী দেড় দশক আগে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়ার রীতি চালু হয়। এই এলাকার আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নামের তালিকা তৈরি করেছিল। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ফণীর পরে আর মাত্র সাতটি নাম অবশিষ্ট আছে। আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে যে-সব ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে, এ বার শুরু হবে তাদের নাম বাছাইয়ের কাজ। অবশিষ্ট সাতটি নাম ফুরিয়ে গেলে নতুন তালিকা কাজে লাগানো হবে।

এই অঞ্চলে মাত্র ১৫ বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিশ্বের অন্যত্র এমন উদ্যোগ অনেক দিনের। ১৯৫৩ সালে ঝড়ের নামকরণ শুরু করে আমেরিকার ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি গোটা দুনিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। তখন শুধু মেয়েদের নামেই ঝড় চিহ্নিত করা হত। নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে তৈরি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে পুরুষ নামও দেওয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের দেওয়া ‘অনিল’ নামের সেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল আরব সাগরে। ভারতের দেওয়া প্রথম নাম ছিল ‘অগ্নি’। সেটি আরব সাগরে জন্ম নিয়ে সোমালিয়ার দিকে ধেয়ে গিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE