E-Paper

এসআইআর চক্রে দুর্ভোগ মনোরোগীদের

সমাজে কার্যত পরিত‍্যক্ত ঘা-খাওয়া মানুষগুলোর সাংবিধানিক অধিকারের জন্য ভোটার কার্ড করানো হয়েছে সরকারি মানসিক হাসপাতালে। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) পর্বে তাঁদের পিতৃপরিচয়ের সূত্র ধরে ২০০২এর তালিকায় সংযোগ পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৫১

—প্রতীকী চিত্র।

জীবনপুরের পথিক ওঁরা সকলেই। কিন্তু কোনওখানে সাকিন নেই বললে ঘোর বিপদ। মানসিক সমস‍্যায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, কোনও হোম বা সরকারি মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের সামনেও এসআইআর পর্বে ‘নেই-নাগরিক’ হওয়ারখাঁড়া ঝুলছে।

সমাজে কার্যত পরিত‍্যক্ত ঘা-খাওয়া মানুষগুলোর সাংবিধানিক অধিকারের জন্য ভোটার কার্ড করানো হয়েছে সরকারি মানসিক হাসপাতালে। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) পর্বে তাঁদের পিতৃপরিচয়ের সূত্র ধরে ২০০২এর তালিকায় সংযোগ পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেমন একজন বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও বাড়ির লোক তাঁকে সেখানেই বসিয়ে রেখে পাততাড়ি গুটিয়েছিলেন। তাঁদের আর খোঁজ মেলেনি। নথি ঘেঁটে ওই আবাসিকের অভিভাবকের নাম ভোটার তালিকায় খুঁজতে হয়রান মানসিক রোগীদের ক্ষমতায়নের শরিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অঞ্জলির প্রতিনিধিরা।

একদা পাভলভের আবাসিক চাঁদনি সরকার এখন সুস্থ হয়ে হাসপাতালে অঞ্জলির চা-ঘরের কাজে মর্যাদার জীবনে স্থিত। কিন্তু জানেন না, কার পরিচয়ের সূত্রে এসআইআরের পরীক্ষায় উতরে ভোটার তালিকায় নাম তুলবেন। জীবন সহায়তা কেন্দ্র প্রত‍্যয়ের আবাসিক আর এক যুবক শুভ্রনীল ছোটখাটো চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবার মহারাষ্ট্রের। যোগাযোগের উপায় নেই। এসআইআর-জটে অনিশ্চিত তাঁরও ভোটার পরিচয়।

পাভলভ, বহরমপুরে এমন আরও আবাসিক রয়েছেন, যাঁদের ঠিকানার খোঁজ মেলেনি। কারও বাড়ি আবার বছরের পর বছর তালাবন্ধ। পাভলভের আবাসিক এক মহিলার ভোটার কার্ড করানো হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে তাঁর বাবা ২০০২এর আগে প্রয়াত। বাড়ির আর কারও নাম সেই সময়ের ভোটার লিস্টে নেই।

হাসপাতালে ভোটার কার্ড করানোর পরে সুস্থ হয়ে বেরিয়ে অনেকে ভিন রাজ‍্যে রয়েছেন। এসআইআর-জট খুলতে তাঁরাও অনেকেই পাভলভে, বহরমপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সুহৃদদের দ্বারস্থ। মানসিক রোগীদের অধিকার রক্ষা কর্মী রত্নাবলী রায়ের মতে, “এই বাস্তবতাগুলি ব‍্যতিক্রমী নয়। শহুরে স্বচ্ছল পরিবারের কেউ কেউ ছাড়া বেশিরভাগই এসআইআর-জটে নাজেহাল। প্রান্তিকতম মানুষগুলির পরিচয় খোঁজার দায় রাষ্ট্র নিজে কেন বহন করবে না?" কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

এসআইআর পর্বে মানসিক রোগীদের অধিকার নিয়ে একই সমস্যার মুখোমুখি তামিলনাডুর সমাজকর্মীরাও। ‘দ‍্য ব‍্যানিয়ন’ সংস্থার অন‍্যতম প্রতিষ্ঠাতা বন্দনা গোপীকুমার বলেন, “সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা তো আশ্বাস দিচ্ছেন, এসআইআর সবার প্রতি সুবিচার করবে। সংবিধান প্রদত্ত ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে নানা মহলে কথা বলছি। নিশ্চয় জট খুলবে।” বিহারে এসআইআর পর্বের নির্দেশিকায়, সমাজের কমজোর, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের হেনস্থা এড়াতে রাজ‍্য নির্বাচন কমিশনকে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের কথা বলে দিল্লির নির্বাচন সদন। কিন্তু বাস্তবে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আলাদা করে মানসিক সমস‍্যাগ্রস্তদের কথা নির্দেশিকায় বলা নেই। এ রাজ‍্যে মানসিক সমস‍্যা বিশিষ্ট ঘরহারাদের অধিকার ও সহায়তায় সক্রিয় ঈশ্বর সঙ্কল্প সংস্থার কর্ণধার সর্বাণী দাস রায় বলছেন, “আমলাদের সাহায‍্যে এগনোর চেষ্টা করছি। তবে যাঁদের নিয়ে কাজ করি, তাঁদের সিকি ভাগের বেশি এসআইআর প্রক্রিয়ার আওতার বাইরে থাকছেন।”

বিভিন্ন মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরনো আবাসিকদের সাহায‍্যে পাশে থাকার কথা বলছেন। তবে আত্মপরিচয়ের জট খুলতে অসহায় মানুষগুলির ভোগান্তি অব্যাহত। রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক কর্তা বলেন, “এসআইআর পর্বে নিয়ম সবার জন‍্য এক। ২০০-২এর ভোটার-তালিকার সঙ্গে যোগসূত্র প্রমাণ না হলে শুনানির সুযোগ মিলবে।” ঘরহারাদের দেশ হারানোর শঙ্কাটি তাতে এড়ানো যাচ্ছে না।

(কয়েকটি নাম পরিবর্তিত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision Mental Health Mental disease West Bengal government BLO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy