পুরস্কার ফেরালেন না। তবে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখে ‘ভারতীয় গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে’ বলে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য অকাদেমিপ্রাপ্ত লেখক-সাহিত্যিকেরা। রাজ্যের আরও কয়েক জন লেখক-শিল্পী ওঁদের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। সব মিলিয়ে ১০০ জন প্রতিবাদীর তরফে কবি-লেখক নবনীতা দেবসেন বুধবার সন্ধ্যায় জানান, রাষ্ট্রপতি ভবনে এ দিন তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাহিত্য অকাদেমিপ্রাপ্ত কন্নড় লেখক এমএম কালবার্গিকে হত্যা ও উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে মহম্মদ আখলাখকে খুনের পরে উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে ওই চিঠি লেখা হয়েছে। তাতে বাংলার সংশ্লিষ্ট লেখক-শিল্পীরা জানিয়েছেন, ভারতে হত্যা ও অসহিষ্ণুতার আবহ তৈরি হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আঘাত পড়ছে ক্রমাগত। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলে রাষ্ট্রপতিকে ওঁদের আর্জি, এই অসহিষ্ণুতার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা হোক। দাদরি-কাণ্ড ও কালবার্গি-হত্যার প্রতিবাদে এ দিন কলকাতায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিলও বেরোয়। ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত যাওয়া মিছিলটির আয়োজক ছিল সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন ও সংখ্যালঘুদের আরও কয়েকটি সংগঠন।
প্রসঙ্গত, ‘অসহিষ্ণুতা’র প্রতিবাদে এ পর্যন্ত সারা দেশের বেশ কিছু লেখক অকাদেমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পড়শি রাজ্য অসমের দুই বিশিষ্ট সাহিত্যিক— হোমেন বরগোঁহাই ও নিরুপমা বরগোঁহাই। পশ্চিমবঙ্গের মন্দাক্রান্তা সেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ২০০৪-এ পাওয়া ‘সাহিত্য অকাদেমি স্বর্ণজয়ন্তী যুবা পুরস্কার’ তিনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। যদিও সাহিত্য অকাদেমিতে বিভূষিত বাংলার এক জনও পুরস্কার ছাড়েননি। ওঁদের সিংহভাগের অভিমত, পুরস্কার ফেরানোটা প্রতিবাদের সঠিক ও যথেষ্ট পথ হতে পারে না। এঁদেরই অন্যতম নবনীতা দেবসেন মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, প্রতিবাদ জানাতে সমাজের গণতন্ত্রকামী ও মুক্তচিন্তার মানুষদের সই সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
পড়ুন: অসহিষ্ণুতায় উদ্বেগ, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি বিদ্বজ্জনেদের
এ দিন পাঠানো সেই চিঠিতে নবনীতা ছাড়াও সই করেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অশোক মিত্র, শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, বাণী বসু, সুবোধ সরকারের মতো অকাদেমি খেতাবে সম্মানিত কবি-সাহিত্যিকেরা। অন্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, চিত্রা সেন ও কৌশিক সেন, লেখক অনিতা অগ্নিহোত্রী, অর্থনীতিবিদ অমিয় বাগচি, কবি শ্রীজাত প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতির দরবারে ওঁদের অভিযোগ, নিরপরাধ সাধারণ নাগরিক অহেতুক হত্যালীলার শিকার হচ্ছেন। নরেন্দ্র ধাবলকর, গোবিন্দ পানসারে, এমএম কালবার্গির মতো স্বাধীনচিন্তা ও শুভবুদ্ধির উৎস ব্যক্তিত্বেরা নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন। ‘অথচ প্রশাসনিক অকর্মণ্যতা ও সরকারি ঔদাসীন্য পদে পদে আমাদের মানবিক অধিকার খণ্ডিত করছে।’— আক্ষেপ করা হয়েছে চিঠিতে। উদ্যোক্তা নবনীতাদেবীর কথায়, ‘‘আশা করব, আমাদের এই সমবেত প্রচেষ্টায় বিন্দুমাত্র হলেও সচেতনতার সৃষ্টি হবে।’’
প্রতিবাদের পন্থা হিসেবে পুরস্কার ফেরানোয় সায় নেই সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি বিশ্বনাথপ্রসাদ তিওয়ারিরও। ‘‘লেখক সব সময়ে স্বাধীন। আমিও আখলাখ খুনের নিন্দা করেছি। কিন্তু এ জন্য পুরস্কার ফেরানো ঠিক মনে হচ্ছে না।’’— এ দিন ফোনে বলেন তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘‘সাহিত্য অকাদেমি লেখকদেরই সংস্থা। লেখকেরাই পুরস্কৃতদের নির্বাচিত করেন। অকাদেমির সব পদাধিকারীও গণতান্ত্রিক ভাবে গোপন ব্যালটে নির্বাচিত। এর উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’’
তাই প্রতিবাদের অন্য উপায় বার করায় জোর দিচ্ছেন তিওয়ারি। জানিয়েছেন, আগামী ২৩ অক্টোবর তিনি অকাদেমির পরিচালন বোর্ডের বৈঠক ডেকেছেন। বোর্ডের সিদ্ধান্ত তিনি মাথা পেতে নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy