Advertisement
E-Paper

হাড়দহের শিবির ছেড়ে এদিকে-ওদিকে রোহিঙ্গারা 

শেষ পরিবারটিও বৃহস্পতিবার সকালে শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছে। বারুইপুরের হাড়দহে রোহিঙ্গাদের একমাত্র আশ্রয়-শিবির এখন ফাঁকা।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৫
নতুন ঠিকানা: হাড়দহ রেলগেটের কাছে এক রোহিঙ্গা পরিবার। বৃহস্পতিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নতুন ঠিকানা: হাড়দহ রেলগেটের কাছে এক রোহিঙ্গা পরিবার। বৃহস্পতিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

শেষ পরিবারটিও বৃহস্পতিবার সকালে শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছে। বারুইপুরের হাড়দহে রোহিঙ্গাদের একমাত্র আশ্রয়-শিবির এখন ফাঁকা।

কোথায় তাঁরা? এ দিন ওই শিবিরের কাছাকাছি একটি বা়ড়িতে গিয়ে দেখা মিলল ২০ জন রোহিঙ্গার। তাঁদেরই এক জন মহম্মদ নাসিমের কথায়, ‘‘মাসখানেক আগে ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে এখানে এসেছি। আমাদের জোর করে মায়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যার জন্য ঘন ঘন বাসাবদল করা ছা়ড়া উপায় নেই। হোসেন গাজি-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের যাবতীয় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’’ মহম্মদ নাসিমের ভাই মহম্মদ নূরের অভিযোগ, ‘‘ভারত আমাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। কিন্তু যে দেশে জন্তুরও নিরাপত্তা নেই, সেখানে যাব কেন? গুলি খেয়ে মরলেও মায়ানমারে ফিরব না।’’

নাসিমেরা যাঁর নাম বারবার বলেন, সেই হোসেন গাজি ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি’ নামে একটি সংগঠনের সম্পাদক। হাড়দহে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে তারাই। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বারুইপুরের হাড়দহে প্রথম এসেছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরে। ধাপে ধাপে ১০০-র বেশি শরথার্থী এই শিবিরে আশ্রয় নেন। হোসেনের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেন। তার পরে পুলিশ বেশ কয়েক বার আমাদের এখানে এসেছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন রোহিঙ্গাকে অসম থেকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদেরও মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে, এই ভয়ে রোহিঙ্গারা হাড়দহের শিবির ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’’ শিবিরের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা এখন দিল্লি, হরিয়ানার বিভিন্ন প্রান্তে চলে গিয়েছেন বলেই তাঁর দাবি। তবে ক্যানিং পশ্চিম-এর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলের সাফ কথা, ‘‘আমার এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা ছড়িয়েছিটিয়ে বাস করছেন। দেশছাড়াদের আশ্রয় দিতে দোষ কোথায়? ওঁরা তো আমাদের কোনও ক্ষতি করেননি।’’

বারুইপুরের হাড়দহ, সাতবিবি, ঘুটিয়ারি শরিফ, সাতবিবি, বাঁশপোতা, ফড়িংপোতা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেও বোঝা গেল, গ্রামবাসীরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্পর্কে দস্তুরমতো অবহিত। কান পাতলেই শোনা যায়, শিবির ছেড়ে শরণার্থীরা পরিচয় গোপন করে ইতিউতি মিশে যাচ্ছেন। যাচ্ছেন এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। বারুইপুরের এসপি অরিজিৎ সিংহও বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাঁদের শিবির ছে়ড়ে দিল্লি, হরিয়ানায় চলে গিয়েছে বলে হোসেন গাজি দাবি করলেও আমরা কড়া নজর রাখছি।’’

রোহিঙ্গা শিবিরের তালাবন্ধ ঘর। বারুইপুরের হাড়দহে। —নিজস্ব চিত্র।

হাড়দহ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সাতবিবি গ্রামে গিয়ে জানা গেল, মাস খানেক আগে সেখান থেকে অন্তত ৩০ জন শরণার্থী চলে গিয়েছেন। বাসিন্দা বাপি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে রোহিঙ্গারা অবৈধ ভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। গ্রামবাসীরা আপত্তি করায় ওঁরা এলাকা ছে়ড়ে চলে গিয়েছেন।’’

সাতবিবি গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী আলি হাসান লস্কর ওরফে ফড়িংয়ের বাড়িতে রোহিঙ্গা শরথার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি। এদিন বাড়িতে গেলে আলি হাসানের দেখা পাওয়া যায়নি। বাড়িতে ছিলেন তাঁর মেয়ে ও বৌমা। তাঁরা জানান, রোহিঙ্গাদের দু’টি পরিবার সেখান থেকে মাস কয়েক আগে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছেন? তা জানেন না বলেই দাবি করলেন তাঁরা। ওই বাড়ি লাগোয়া এক মহিলার কথায়, ‘‘আলি হাসানের বাড়িতে যে রোহিঙ্গা পুরুষ ছিলেন, তিনি চশমা কেনাবেচা করতেন। আমার বাড়িতেও তাঁর আসাযাওয়া ছিল। উনি চলে গেলেও কয়েকটি চশমা আমার কাছে পড়ে রয়েছে।’’

Rohingya Relief Camp Migration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy